টিউশন
শেষে বাসার দিকে যাচ্ছি। মনটা
একটু খারাপ, বেতন দেয়নি আজকে।
কলিংবেল
দেওয়ার সাথে সাথে বাসার
ভিতর থেকে দৌড়াদৌড়ির আওয়াজ
শুনতে পেলাম। সেটা আর কেউ
না, আমার ছোট ভাই
নাকিব।
আচ্ছা
এটা ও বলতে মনে
ছিল না যে, আমরা
তিন ভাই, এক বোন।
সবার বড় আঁচল দিদি,
এরপর নাঈম ভাইয়া, এরপর
আমি আর সবার ছোট
নাকিব। নাঈম ভাইয়া একজন
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার, অস্ট্রেলিয়া থাকেন, অতিরিক্ত জিনিয়াস এবং চিল একজন
মানুষ। ওর সাথে আমার
সম্পর্কটা সম্পূর্ণ অন্যরকম। আমরা শুধু সহোদর
না, একে অপরের অনেক
ভালো বন্ধু ও বটে। অন্তত
নাঈম তা মনে করে।
এখন তো বিদেশ থাকে,
আমার সাথে কথা বলার
অত সুযোগ পায় না। চাকরিটা
ও অত্যধিক ভালো, ব্যস্ততা ও অনেক বেশি।
কিন্তু ঠিকই প্রতিদিন মেসেঞ্জারে
নক করে আমি ঘুমাই
কিনা জিজ্ঞাসা করতে ভুলে না।
সামনে নাকি সে বড়
একটা ছুটি পাবে, তখন
দেশে আসবে। আঁচল দিদি ধান্ধায়
আছে যে, নাঈম দেশে
আসলেই তার গলায় ঝুলিয়ে
দিবে কাউকে। নিজে তো লোক
লাগিয়েছেই, আমাকে ও বলে পাত্রী
খুঁজতে। আমি অবশ্যই
এসব পাত্রী খোঁজাখুঁজিতে নেই। ঘুমিয়েই কূল
পাই না, আবার খুঁজব
পাত্রী। আর উনার বিয়ে
দিয়ে আমার কাজ কি?
উল্টো কামলা দেওয়া লাগবে আর হাজার রকম
দায়িত্ব তো আছেই। ওরে
বিয়ে দিয়ে আমার কোন
স্বার্থ উদ্ধার হবে না, তাই
আমি ও এইসব ফ্রি
কামলাতে নেই। আর নাকিব,
সবার আদরের ছোট ভাই, উনি
ক্লাস সিক্সে পড়েন, সুপারহিরো প্রেমিক, সারাদিন কমিক, মুভি, অ্যানিমেশন নিয়ে পড়ে থাকতে
পছন্দ করে। সাংঘাতিক দুষ্ট
বাচ্চা এবং পড়াশোনায় অনেক
মনযোগী! দিদি এবং ভাইয়ার
মতই নাকিব আমাকে অনেক পছন্দ করে,
আমার বিশাল বড় একজন ভক্ত
সে।
"নীল
ভাইয়া!" দরজা খুলেই নাকিব
জড়িয়ে ধরল আমাকে।
"কি?
স্কুলে গিয়েছিলা?"
"এটা
কোন কথা বললা?" নাকিব
আহত চোখে আমার দিকে
তাকিয়ে বলল।
মনে
মনে খুব হাসছি। আমি
জানি কোন এক মতলব
আছে নাকিবের, নাহলে এভাবে এসে জড়িয়ে ধরার
কথা না। যেভাবেই হোক
ওর গুটিবাজি এড়িয়ে যেতে হবে, নাহলে
আমার জন্য একটা মারা
অপেক্ষা করছে।
"এটা
কোন কথা বললাম মানে?
সারাদিন ভণ্ডামি করলে হবে?"
"এই
নীল! বকছিস কেন নাকিবকে?"
হয়েছে,
চলে এসেছে আঁচল দিদি। সদাই
না এনে যে পালিয়ে
গিয়েছিলাম এজন্য এখন এক বস্তা
কথা শুনতে হবে। অবশ্য আমি
এখনো ভাবছি যে সদাই আনতে
গেলে আমার কিছু লাভ
হত, মানে বাজারের টাকা
থেকে কিছু টাকা সরিয়ে
নিজের পকেটে ঢোকানো যেত আর কি।
আচ্ছা, যা লোকসান হবার
তা তো হয়েই গেছে,
কিছু করার নেই এখন।
"আরে
আর বলো না, বাইরে
থেকে আসলাম মাত্র আর এখনই জ্বালানো
শুরু করেছে আমাকে।"
"তোকে
না বলেছিলাম সদাই আনতে? কে
জানি পালিয়ে গেল?"
"না
মানে ইয়ে, পড়াতে গিয়েছিলাম...."
"ফাতরামি
করস আমার সাথে? গিয়েছিলি
তো বিড়ি খাইতে আর
আড্ডা দিতে!"
আমি
সিগারেট খাই এটা বাসার
সবাই জানে, প্রথমে মানা করত, নাঈম
মারতো ও আমাকে এর
জন্য। এখন আর কিছু
বলে না, ভার্সিটির বড়
ভাই না এখন আমি,
বুঝতে হবে!
"বিশ্বাস
না করলে কিছু করার
নেই। ক্ষুধা লেগেছে, খাবার দাও।"
"সদাই
এনেছিলি যে খাবার চাস?"
আমি
ভালো করেই জানি যে
কেউ না কেউ বাজার
করেছে, রান্না ও হয়েছে। দিদি
ইচ্ছা করেই ঝাড়ছে আমাকে।
সমস্যা নেই, আমি ও
এখন তাল মিলাব দিদির
সাথে।
"ওমা,
কেউ আনে নি? লিস্ট
দাও, এখনই যাচ্ছি।"
"যাওয়া
লাগবে না, দারোয়ানকে দিয়ে
আনিয়েছি।"
"তাহলে
তো ভালোই। খাবার রান্না হয়েছে না? দাও, দেরি
করছ কেন?"
"তুই
যাস নাই কেন? এর
জন্য তোর ভাত বন্ধ।"
"ঠিক
আছে।"
রুমের
দিকে পা বাড়ালাম। ভাত
বন্ধে সম্মতি জানানোটা ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল ছাড়া আর কিছুই
না। খুব ভালো করেই
জানি যে, ১০ সেকেন্ডের
মধ্যে দিদি ডাক দিবে
আমাকে।
"কই
যাস? হাত মুখ ধুয়ে
টেবিলে বস।"
হাহাহা,
কি বলেছিলাম? পৃথিবীতে রাত দিন হয়ে
যাবে, দিন হয়ে যাবে
রাত, কিন্তু দিদি আমাকে খেতে
দিবে না এটা কখনোই
সম্ভব হবে না।
যাই
হোক, বিশ্ব জয় করে ফেলেছি
এমন ভাব-সাব নিয়ে
বেসিনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
ওদিকে
নাকিব ও আমার সাথে
খেতে বসবে বলে চিৎকার
শুরু করেছে। দিদি আমার আর
নাকিবের জন্য খাবার বাড়া
শুরু করেছে। হ্যাঁ, এটাই আমার পরিবার।
নীল, দিদি, নাকিব আর নাঈম - আমি
এবং তারা। না না, আমি
এবং আমরা।
[[অয়ন আল মামুন]]
[[অয়ন আল মামুন]]
No comments:
Post a Comment