ফেকার #০৪ --- অয়ন আল মামুন


মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। টের পেতাম না হয়তো, কারণ আমি গেম খেলছি। কিন্তু মেঘ এবং নাকিব দুইজনই যেভাবে সমানে গর্জন করছে, তাই কানে হেডফোন থাকলে আমি টের পেতে বাধ্য। কিরে ভাই নাকিব, তুই কি জীবনে বৃষ্টি দেখিস নাই নাকি, এভাবে বৃষ্টি দেখে ব্যামানির মানে কি? তুই তো এখন ক্লাস ওয়ান-টুতে পড়িস না। ওমা, আমি ডিসকানেক্টেড কেন গেম থেকে! রাউটারের দিকে তাকিয়ে দেখি কমলা বাতি, নেট চলে গিয়েছে। বৃষ্টি হলেই ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের প্রথম কাজ, নেট অফ করে দেওয়া। নেট বন্ধ করতে পারলে ওদের মনে খুশীর কোন সীমা থাকে না, কেমন বেয়াদবি এটা!
"এই নাকিব, চিৎকার করছিস কেন!"
হেডফোনটা কান থেকে খুলে চিৎকার করে উঠলাম। আসলে চিৎকার করার কি দরকার ছিল আমি নিজেও চিন্তা করছি, আশ্চর্য আমি কেন চিৎকার করলাম? আচ্ছা বুঝলাম, নেট চলে যাওয়ার রাগ ওর ওপর দিয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা যাক ভালো হয়েছে, ছাগলের মত সে কেন ব্যামাবে সেটার একটা বিচার করা দরকার ছিল। ওই যে বের হয়েছে বারান্দা থেকে বাদরটা।
"ভাইয়া, দেখ কি সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে।"
বলে কি, বৃষ্টি আবার সুন্দর কিভাবে হয়। আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়বে এটা প্রকৃতির নিয়ম, এখানে সুন্দরের কি আছে। শালা নিশ্চিত প্রেমে পড়েছে। ভ্রু কুঁচকে চেয়ার থেকে উঠে নাকিবের কানটা ধরে বললাম,
"কিরে, তুই কি প্রেম-টেম করিস নাকি?"
"এই নীল, কি হয়েছে রে?"
দিদি আসছে, তাড়াতাড়ি কানটা ছেড়ে দিলাম।
"কই দিদি, কিছু হয় নি তো।"
"দিদি, ভাইয়া আমার কান মলে দিয়েছে। জিজ্ঞেস করে আমি প্রেম করি কিনা।"
এই শালা করলি কি, এবার দেখি দিদি আমার কান মলবে। দিদির দিকে তাকিয়ে দেখি দিদি কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
" কথা কেন বলেছিস তুই?"
"আমাকে বলে, বৃষ্টি নাকি সুন্দর।"
"বৃষ্টি তো সুন্দরই, বলেছে বেশ করেছে।"
"শুধু বললে একটা কথা ছিল, সাথে চিৎকার আর লাফালাফি ফ্রিতে করছে।"
"এহ, এমন ভাবে বলছিস যেন তুই ছোট থাকতে এমন করতি না। কত বৃষ্টিতে ভিজেছিস। একটা সময় ছিল যখন বৃষ্টি হলে তোকে আটকানোই যেত না, দৌড়িয়ে ছাদে চলে যেতি, অথবা বাইরে।"
"ওই সময় ছোট ছিলাম।"
"তাহলে? নাকিব কি বুড়া নাকি?"
কথা ভুল বলে নি, নাকিব তো বাচ্চা। আর এক সময় আমি উরণচন্ডী ছিলাম। বৃষ্টি মানেটাই আমার কাছে এক সময় অন্য রকম ছিল, আর এখন অবস্থা তার সম্পূর্ণ বিপরীত। আচ্ছা, এখন যদি আমি ভুলে স্বীকার করি যে, নেটওয়ালার উপর যে ঝাল ছিল সেটা আমি নাকিবের উপর ঝাড়ছি, তাহলে মহাবিপদ হবে। আপাতত এখান থেকে কেটে পড়াটাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
"বুড়া না তো কি? এখন কি ক্লাস ওয়ান-টুতে পড়ে নাকি? থাকো তোমরা বৃষ্টি তোমাদের নিয়ে, গেলাম আমি।"
"এই কই যাস? চল, আমাদের সাথে এখন বারান্দায় যাবি তুই।"
কেমন ক্রিন্জ, সপরিবারে নাকি বৃষ্টি দেখবে। আমি কথা না বাড়িয়ে রুমে ঢুকলাম। দরজাটা ঠেলা দিতে যাব এমন সময় দিদির প্রবেশ। রুমে ঢুকেই দিদি আমার রুমের বারান্দার দরজাটা খুলে দিল। এই ফাঁকে ঝড়ের বেগে নাকিব আমার ঘরে ঢুকে, বারান্দায় চলে গেল। কেমন জ্বালাতন, তারা ভালো করেই জানে আমার রুমের দরজা-জানালা খোলা আমি ভীষণ অপছন্দ করি।
"এই কি হচ্ছে এখানে..."
"চুপ! আয়, বৃষ্টি দেখি।"
বলে দিদি আমাকে চেয়ার থেকে টেনে তুলে বারান্দায় নিয়ে গেল।
বৃষ্টি একটু শান্ত হয়েছে। রাস্তার বাল্বের আলোতে দেখা যাচ্ছে, গাছের পাতার উপর দিয়ে বৃষ্টির পানি টপটপ করে নিচে পড়ছে। পাতাগুলো বেশ সবুজ-সবুজ রং ফিরে পেয়েছে। আকাশে বিদ্যুৎ আঁকা-আঁকি খেলছে। বৃষ্টির গন্ধটা অন্য রকম। আসলে বৃষ্টি এত খারাপ না। যখন বাইরে থাকি তখন বৃষ্টি হলে মেজাজ ভীষণ খারাপ হয়। পকেটে মোবাইল থাকে, ভিজে নষ্ট হয়ে যাবে তাই। এরপর ঘন্টার পর ঘন্টা কোন কিছুর নীচে দাঁড়িয়ে থাকা লাগে। অবশ্য এখন চিন্তা করছি নিচে নেমে একটু ভিজবো কিনা। নাহ, কোন মানেই হয় না, অনেক কষ্টের কাজ। আর একটা বিড়ি হলে খারাপ হত না, কিন্তু এখন বিড়ি ধরালে দিদি ভীষণ পিটবে। আর আমি দিদি-ছোট ভাইয়ের সামনে সিগারেট খাই না। ধূর, যাই শুয়ে পড়ি। বৃষ্টি মানেই ঘুমের সময়। রুমে ঢুকে কম্পিউটারটা বন্ধ করে লাইটটা নিভিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। রাস্তার আলো নিভে গেছে, আমার রুমের ফ্যানটা জোরে ঘুরতে শুরু করেছে। তার মানে কারেন্ট চলে গিয়েছে এবং আইপিএস চালু হয়েছে। নাকিবের হৈচৈ এখন কানে আসছে, মেঘ কাশি দিচ্ছে কিছুক্ষণ পরপর। বারান্দা দিয়ে সুন্দর বাতাস আসছে। নাহ, মাঝে মাঝে বৃষ্টি হলে খারাপ হয় না, শান্তিতে ঘুমানো যায় আরকি।
                                                  [[অয়ন আল মামুন]]

জীবনমাল্য

লেখক ... .

No comments:

Post a Comment