আবার দেখা --- অয়ন আল মামুন

নীল প্রচন্ড বিরক্তির সাথে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। এমনিতেই রাস্তা প্রচন্ড সরু, তার উপর রাস্তায় যানজট।যানবাহন ও প্রচুর আবার অন্যদিকে ফুটপাতে ও মানুষ গিজগিজ করছে। নীল এখন সিদ্ধেশরীতে আছে। আশেপাশে বেশ কয়েকটা স্কুল-কলেজ আছে, ওগুলো ছুটি হয়েছে, তাই এখন এই এলাকার সাথে মাছের বাজারের কোন পার্থক্য নেই। নীল যাচ্ছে রমনা পার্কের দিকে। পার্কে বেঞ্চ আছে, বাতাস আছে এবং বেশ নিরিবিলি জায়গা।আরাম করে শুয়ে বসে থাকা যাবে, রোদ কমে যাওয়ার আগ পর্যন্ত। যথারীতি সূর্যের প্রচন্ড তাপ নীলকে ভস্ম করছে। নীল ঘেমে সিদ্ধ, তার উপর ফুটপাথের যানজট ঠেলে এগুচ্ছে।কিছুক্ষণ পর সে বেইলিরোডে এলাকায় প্রবেশ করল। সামনে অনেক বড়-বড় রেস্টুরেন্ট, ফুটপাতে ও অনেক খানা-দানা দেখা যাচ্ছে। ঝালমুড়ি, ফুসকা, বেলপুরী, আইসক্রিম সহ আরো অনেক খাবার। এগুলো বিক্রি হচ্ছে স্কুল-কলেজগুলোর সামনে। মানুষ ও খাবার-দাবারের দোকানগুলোর সামনে ভিড় করেছে। আর ধনী লোকের সন্তানেরা এতক্ষণে তাদের দামী গাড়িতে চেপে বসেছে। বেইলিরোডের রাস্তায় ও যানজট। নীল রাস্তা পার হবে।যানজট থাকায় বিনা বাধায়, বেশ আরামে রাস্তা পার হয়ে গেল। কয়েক পা সামনে সিদ্ধেশ্বরী কলেজ। ওই যে, নীলের প্রিয় একটা ফুসকা-চটপটির গাড়ি দেখা যাচ্ছে। এক সময় বন্ধু-বান্ধবের সাথে খাওয়া হত, সেগুলো আজ অতীত। টাকা আছে, চাইলে খাওয়া যায়। এই নিয়ত করেই গাড়িটার দিকে এগুচ্ছে নীল। তার আগেই একটি মোটরসাইকেল এসে থামল দোকানটার সামনে। আর ওয়ান ফাইভ (Yamaha YZF-R15)। মোটরসাইকেল থেকে এক জোড়া কপোত-কপোতী নামল। কপোতী নেমে আশেপাশে তাকাতেই তার চোখ পড়ল নীলের উপর। কপোত অবশ্য নেমেই ফুসকা অর্ডার দিতে গিয়েছে। নীল ও তাকিয়ে আছে কপোতীর দিকে। মেয়েটি আর কেউ নয়, অরুণা।
"নীল?" অরুণা নিশ্চিত হওয়ার জন্য জিজ্ঞেস করল।
"মনে তো হচ্ছে।"
কয়েক মুহূর্তের জন্য যেন পৃথিবীর সব কিছু স্তব্ধ হয়ে গেল। অরুণার ব্যাপারটা সামলে নিতে একটু সময় লাগল আরকি।
"এত দিন কোথায় ছিলে?"
"এইতো, ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম।"
"তাই বলে দুই বছর ধরে? বাসা থেকে পালিয়ে কেউ ঘুরে বেড়ায়???"
নীল কোন উত্তর দিল না।
"অরুণা, কার সাথে কথা বলছ?" এমন সময় কপোত ২ প্লেট ফুসকা হাতে নিয়ে আসতে আসতে বলল।
নীল ছেলেটাকে ও চিনে। ছেলেটার নাম লিখন। অরুণার বয়ফ্রেন্ড। লিখন ও নীলকে চিনে। তাই একটু এগিয়ে এসে নীলকে দেখে থমকে গেল।
"নীল? তুই?"
"হু, আমি।"
"অরুণার কাছে অনেক আগে শুনেছিলাম তুই নিরুদ্দেশ হয়েছিস। ভাবছিলাম জঙ্গিতে যোগ দিলি কিনা।" বলে হো-হো করে হাসতে লাগল লিখন।
নীলের প্রচন্ড রাগ উঠল। মন চাইল কিছুক্ষণ ধরে পিটায় লিখনকে। অনেক কষ্টে নিজেকে ঠান্ডা করল নীল। রাগারাগি-মারামারি নীলের অপছন্দ। নীল বরাবরই শান্তিপ্রিয় মানুষ।
"লিখন, কেউ নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার মানে এই না যে সে জঙ্গিতে যোগ দিয়েছে।" তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল নীল।
"রাগ করিস কেন? আমি তো মজা করলাম।"
"সব সময় মজা ভালো লাগে না। চললাম আমি।" বলে নীল উল্টো দিকে রওনা দিল।
"আরে দাঁড়া! এতদিন পর দেখা, ২-৪ টা ফুসকা তো খেয়ে যা।" লিখন পেছন থেকে ডাক দিল।
নীলের এত কথা শোনার সময় নেই। রমনায় যাবে না, তাই বাসার দিকে যাচ্ছে। লিখন অরুণাকে ফুসকার প্লেটটা হাতে দেওয়ার জন্য তাকিয়ে আছে অরুণার দিকে, কিন্তু অরুণা তখন ও তাকিয়ে আছে নীলের দিকে। অন্যদিকে রোদ ও যথারীতি তাপ দিচ্ছে, কিন্তু নীল তোয়াক্কা করছে না। সূর্যের উত্তাপের চেয়ে যে মনের উত্তাপ বেশি, তাই।
#দুই_বছর_পর
#আবার_দেখা
#নীল_আর_অরুণা
#হঠাৎ_তোমার_জন্য
[[অয়ন আল মামুন]]

Unknown

লেখক ... .

No comments:

Post a Comment