পৌঁছাতে
পৌঁছাতে একটা বেজে গেল।
ক্লাসের বাকি আছে আর
মাত্র ত্রিশ মিনিট। এখন আর ক্লাসে
ঢুকবো? আচ্ছা যাই ক্লাসে, এত
কষ্ট করে আসলাম, এটেন্ডেন্সটা
তো নেওয়া লাগে।
"স্যার
আসবো?"
স্যার
বোর্ডের দিক থেকে চোখ
সরিয়ে ক্লাসরুমের দরজার দিকে তাকালেন। দরজায়
আমি দাঁড়ানো, খুব হাঁপানোর ভান
করছি। ইতিমধ্যে সহপাঠীরা হাসাহাসি, হট্টগোল লাগিয়ে দিয়েছে আমাকে দেখে।
"বাবা,
কে তুমি?"
"স্যার,
আমি নীল।"
"কয়টা
বাজে?"
"একটা।"
"আমার
ক্লাস কয়টায় ছিল?"
"বারোটায়।"
"তাহলে
তুমি একটায় আসলে কেন?"
"রাস্তায়
অনেক জ্যাম ছিল, বিশ্বাস করেন,
আমি আগে আশার আশার
চেষ্টা করেছিলাম স্যার। এজন্য আমি দৌড়ে যত
তাড়াতাড়ি সম্ভব এসেছি...."
এতটুকু
বলার সাথে সাথে পোলাপান
ও-ও-ও-ও
করে চিৎকার শুরু করে দিল।
ওই যে একটা মিম
টেমপ্লেট আছে না যেখানে
নিগারা চিৎকার করে লাফিয়ে উঠে?
অবিকল ঐটা।
"স্যার
আসলে ওর বাসাটা একটু
দূরে আর ওর ভার্সিটি
আসার রুটে অনেক যানজট
থাকে, তাই আসলে ওর
আসতে দেরি হয়েছে।" আমাকে
বাঁচানোর জন্য আমার বন্ধু
আবির বলে উঠলো।
"স্যার,
আমি ক্লাসে আসার আগে ওরে
কোন মেয়ের সাথে যেন বসে
থাকতে দেখলাম।" জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল
তারেক।
পোলাপান
আবার হাসা শুরু করে
দিল। দিল তো হারামজাদা
তারেক আমাকে মারাটা। আবির যা বলেছিল,
স্যার তারেকের কথা শুনে সেটা
ভুলেই যাবেন, এটা আমি নিশ্চিত।
"সাইলেন্ট!"
স্যার চিৎকার করে উঠলেন।
স্যারের
ধমকে ক্লাস নীরব হয়ে গেল।
"বাবা
নীল।"
"স্যার?"
"প্রেম
করছিলি?"
"না
স্যার। আমি এসব করি
না, আমি ভালো ছেলে।"
আবার
ও হো-হা আওয়াজ
অডিয়েন্স গ্যালারি থেকে, স্যার ওদের দিকে আবার
তাকালেন, ওরা ও থেমে
গেল।
"আরে
বেটা, কি বলিস। এই
বয়সে প্রেম না করলে কখন
করবি? এখন মনে রং
না লাগলে আর কখন?"
"এহ?"
"এহ
করছিস কেন, তোর এটেন্ডেন্স
লাগবে তো? আমি দিয়ে
দিব। তুই যা, প্রেম
কর।"
"স্যার,
আমি প্রেম-ট্রেম করি না। আমি
আসলেই জ্যামের কারণে দেরি করেছি। আমাকে
ক্লাস করতে দিন, এমনিতেই
আপনার এক ঘন্টার লেকচার
মিস করেছি। বাকিটা একটু শুনি, এরপর
বন্ধুদের থেকে আগে কি
পড়িয়েছেন শুনে নিব। উপস্থিতি
দিবেন নাকি না দিবেন
সেটা আপনার ইচ্ছা।"
সবাই
থ। এমন চাপা মারলাম
যে, শুধু স্যার কি,
পুরো ক্লাস কিছু বলার ভাষা
হারিয়ে ফেলেছে।
"যা
বস!"
স্যারের
কথা শুনে মনে মনে
৬৪ দাঁত বের করে
হাসি দিয়ে ক্লাসের পেছন
দিকে গিয়ে তারেকের বাম
পাশে গিয়ে বসলাম। ৬৪
দাঁত বলতে বিশাল আনন্দ
বুঝালাম আরকি। খুশি হলে আমি
প্রায়ই ৬৪ দাঁত বের
করে হাসি। ওদিকে স্যার আবার পড়ানো শুরু
করেছেন।
"কিরে
মামা তুই কি কইলি
এইডা স্যাররে!" আবির বলল।
"কি,
কেমন দিলাম? আমাকে সালাম দিবা।" আবিরকে উত্তর দিলাম।
"মারা
খাও তুমি।" আবির বলল।
"এই
শালার পুত! তুই স্যারকে
এইটা কি বললি?" আমি
তারেককে বললাম।
তারেক
অন্যদিকে তাকিয়ে আমার কথা না
শোনার ভান করল। কেমন
ফটকা, দিলাম তারেককে কষিয়ে পিঠে এক থাপ্পড়।
"কিরে
থাবড়া মারলি কেন!" তারেক একটু জোরেই বলে
উঠল।
"এই
কে কাকে থাবড়া দেয়?"
স্যার
শুনে ফেলেছেন তারেকের কথা।
"স্যার
তারেক আবিরের পিঠে থাপ্পড় মেরেছে।"
অনা বললো।
কিন্তু,
কিন্তু, কে কাকে থাপ্পড়
মারল? আর কে চিৎকার
করল? আর অনা কি
বলল?
"তারেক
সামনে আয়!"
"স্যার
আমি কিছু করি নাই।"
"তোর
কিছু করা লাগবে না।
তুই সামনে আয়।"
তারেক
সামনে গেল।
"এই
যে তুই প্রতিদিন ক্লাসে
উৎপাত করিস, তোর জ্বালাতনে যে
আমি একদিন ও শান্তিতে ক্লাস
নিতে পারি না এটা
কি ঠিক?"
"স্যার
আমি কখন উৎপাত করলাম?
অনা মিথ্যা বলেছে।"
ওদিকে
আমি, আবির, অনা, মাহফুজ পিছনে
বসে ভীষণ কেলাচ্ছি।
"স্যার,
আমি পড়াটা বুঝার চেষ্টা করছিলাম, এর মধ্যে তারেক
আমাকে প্রচন্ড জ্বালাচ্ছিলো স্যার।" আবির পড়ুয়া ছাত্রের
মত একটু ঢং করল।
"কিহ?
তুই পড়া বুঝার চেষ্টা
করছিলি? তুই? এখুনি সামনে
আয়!"
আবির
ও সামনে গেল।
"বল
তো কি পড়াচ্ছিলাম আমি?"
"আসলে
স্যার মানে...."
"কি
পড়াচ্ছিলাম? "আসলে স্যার মানে?"
"
"আসলে,
তারেক আমাকে গুতাচ্ছিলো তো, তাই কি
পড়াচ্ছিলেন খেয়াল করতে পারি নাই।"
"এহ,
পুরো ক্লাসে কি পড়িয়েছি তার
একটা লাইন ও তো
বলতে পারবি না।"
আবির
চুপ হয়ে হয়ে গেল।
"তো
কি করা যায় এখন
তোদেরকে?"
"স্যার
একজন গান গাবে, আর
একজন নাচবে।" মাহফুজ বলে উঠলো।
"খারাপ
বলিস নাই। তো কে
গাইবে আর কে নাচবে?"
"এটা
তো সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছা স্যার। আপনি যেটা বলবেন
সেটাই হবে!"
কেমন
চোর। তেল দেওয়ায় আমার
বন্ধু মাহফুজ বরাবরই ওস্তাদ।
"তোদের
২ মিনিট সময় দিলাম। কে
কি করবি ঠিক কর।
ওই ফাঁকে আমি নাম ডাকি।
ক্লাসের টাইম শেষ, তোদের
জ্বালায় আজ ও কিছুই
পড়াতে পারলাম না।"
ক্লাসে
আবার হৈ-চৈ শুরু
হয়ে গেল। স্যার রোল
ডাকে আর অন্য দিকে
পোলাপান তারেক আর আবিরকে নানারকম
সাজেশন দিতে শুরু করেছে।
মাহফুজ আমাকে হাই-ফাইভ দিল।
ওমা, অনা দেখি ব্যাগ
থেকে পপকর্ন বের করেছে। মানে,
কেমন ফাতরা পোলাপান। ওদিকে তারেক আর আবির ভেগে
যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু পোলাপান নাছোড়বান্দা, আজকে কোনভাবেই ছাড়বে
না। মাঝে মাঝে বিনোদন
ভালোই লাগে। অনার হাত থেকে
পপকর্ণের ঠোঙাটা নিয়ে পপকর্ণ খাওয়া
শুরু করলাম। ভাবছি, এই যে পোলাপানগুলো,
কখনো কখনো এদের মত
বন্ধু হয়ই না, আবার
এই পোলাপানগুলোই কখন কিভাবে তোমাকে
মারা দিবে ভাবতে ও
পারবে না। আসলে কি
আর করার, স্বার্থের কাছে মানবতা যে
আজ শিকলে বন্দি। তাই, মানবতার ধার
কে ধারে? আমি ধারি না,
আপনি ধারেন নাকি?
[[অয়ন আল মামুন]]
No comments:
Post a Comment