অবশেষে অরণ্য (পর্ব ১)

রাত প্রায় ১২টা,পৃথিবীটা প্রায় ঘুমিয়ে গেছে।ব্যস্ত শহরটা নিরব হয়ে আছে, একদম নীরব।মাঝে মাঝে
দু 'চারটা কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুনা যাচ্ছে।ডাস্টবিনের পাশে কিছু ছেলে ঘুমিয়ে আছে,আমাদের সমাজ যাদেরকে টোকাই ছেলে বলে।সারাদিন ওরা ডাস্টবিনের ভিতর খাবার খুঁজে আর রাত হলে ডাস্টবিনের পাশেই ঘুমিয়ে পড়ে।সব চেয়ে মজার
বিষয় হল, আমাদের সমাজে এই টোকাই ছেলেগুলোদর আপন বলতে কেউ নেই।ছেলেগুলোর পাশে একটা কুত্তা ভাই বসে আছে।কিন্তু অদ্ভুত বি ষয় কুত্তা ভাইটা ঘুমিয়ে নেই।জিহ্বা বের করে বসে আছে।মনে হচ্ছে যেন কুত্তা ভাই
টোকাই ছেলেগুলোদের পাহারা দিচ্ছে।হেঁটে-হেঁটে ক্লান্ত হয়ে গেছি তাই ওদের পাশেই বসে পড়লাম।কুত্তা ভাইটা আমার দিকে আড় চোখে তাকালো।হয়তো মনে মনে ভাবছে এই টোকাইটা আবার কোথা থেকে আসলো?
"কি হলো কুত্তা ভাই কি ভাবছেন?"
"না ভাবছি তুমি এত রাতে আরামের বিছানায় না ঘুমিয়ে এই আমাদের মাঝে এখানে বসে আছো কেন?তোমার তো এখন সবার মতো আরাম করে ঘুমিয়ে থাকার কথা।"
"আচ্ছা কুত্তা ভাই এখানে তো তুমি একা বসে আছ তাহলে আমাদের মাঝে এই কথা বললে কেন?"
"কে বলল এখানে আমি একা?এই যে দেখতে পাচ্ছ না তোমার সামনে কিছু টোকাই ছেলে ঘুমিয়ে আছে যাদের কে
তোমাদের সমাজ কুত্তার বাচ্চা বলে, আমি তাদের সাথেই বসে আছি।"
কুত্তা ভাইয়ের এরকম কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেছে। বসে বসে কি যেন ভাবছি।কিন্তু কি ভাবছি নিজেই জানিনাপাশ ফিরে তাকাতেই দেখে কুত্তা ভাইটা পাশে নেইকোথায় যেন চলে গেছে।
খুব ঘুম পাচ্ছেআরামের বিছানাটা আমার জন্য অপেক্ষা করতেছে,কেন আমি এখানে বসে থাকব। তাই বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করলাম।
হঠাৎ পিছন থেকে,
"অরণ্য ভাই,অরণ্য ভাই।"
"কে?"
"আমি"
"ওহ,কুত্তা ভাই।"
"হুম। এই দেখ নতুন একটা কুত্তার বাচ্চাকে নিয়ে এসেছি।"
একি!এতো মানুষের বাচ্চা,নবজাতক শিশু।যে শিশুটা ১০ মাস ১০ দিন মায়ের গর্ভে থাকার কথা।সে না কি এখন ডাস্টবিনের পড়ে আছে।মায়ের গর্ভে ও জায়গা হয়নি এই হতভাগাটার,হয়তো জায়গাই পায়নি।পৃথিবীরমুখটা দেখার আগে ওকে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
"আচ্ছা অরণ্য ভাই,একটা প্রশ্নের উত্তর দাওএটা তোমাদের কি রকম সমাজ?যে সমাজ মানুষদেরকে আমাদের স্তরে নামিয়ে দিয়েছে?"
একা একা হাঁটছি আর এ প্রশ্নটার উত্তর খুজছি কিন্তু জীবনে ও প্রশ্নের উত্তর পাবো বলে মনে হয় না।

(চলবে ... )
পরবর্তী পোস্টঃ অবশেষে অরণ্য (পর্ব ২) 

Unknown

লেখক ... .

No comments:

Post a Comment