ফেকার #০২ --- অয়ন আল মামুন



এক গেম প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে যে। কোন বাহানাই রেডি করতে পারিনি, আসলে বন্ধু-বান্ধবকে বাহানা দেওয়া কঠিন আছে। শালারা তো অবিভাবক শ্রেণীর মানুষ না যে চাপা একটা মারলাম আর বিশ্বাস করে ফেলল।
যাক, বাহানা দেওয়া লাগল না। ফোনটা ভাইব্রেট করে উঠল। ছাত্রের মা ফোন দিয়েছে। ফোনটা ধরলাম।
"আসসালামু আলাইকুম আন্টি।"
"ওয়ালাইকুম আসসালাম, বাবা কেমন আছ?"
"আছি ভালোই আপনাদের দোয়ায়, আপনি কেমন আছেন?"
"আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। বাবা তুমি আজকে আমার ছেলেটাকে একটু কেমিস্ট্রিটা দেখাতে পারবা? ওর নাকি আগামীকাল কি একটা পরীক্ষা আছে। তুমি যদি আজকে একটু অবসর থাকতা তাহলে..."

এখানে একটু টাইমটাকে স্টপ করি। এখানে বেশ কিছু জিনিস জানানোর আছে। আমি টিউশনি করাই ২টা। ঢাকা শহরে টিউশনির অনেক আকাল থাকলেও আমার এতে কোন অসুবিধা হয় না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার এটা একটা কার্মা। এই যুগে অভিভাবকেরা তাদের সন্তানের জন্য বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষক হিসেবে চায়, যদিও তাদের বাচ্চা নার্সারি-কেজিতে পড়ে। ওনাদের এই রকম চিন্তা-ভাবনার পিছনে কারণটা কি আমি বুঝে উঠতে পারিনি এখন ও। পাবলিক ভার্সিটির পোলাপান কি আপনার সন্তানকে নার্সারীতেই ক্যালকুলাস গিলিয়ে দিবে নাকি বিদ্যাসাগর বানিয়ে দিবে? আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েরা কি দোষ করেছে যে আপনারা তাদের হাতে আপনার সন্তানকে ছাড়তে চান না? ওদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এতো খারাপ না যতটা আপনি মনে করেন, কখনো কখনো তারা পাবলিকের পোলাপানের থেকে অনেক এগিয়ে। যাই হোক, উনাদের বাচ্চা উনারা বুঝবে, আমার কি? আমার তো টিউশনির অভাব পড়ছে না। আবার পাবলিকের পোলাপান দিয়ে নিজেদের সন্তানকে পড়াতে তাদের খসাতে হয় তাদের মোটা অংকের পয়সা। তবু তারা রাজি। ওই যে, বিদ্যার জাহাজ বানালে ভবিষ্যতে ওই বিদ্যার জাহাজ টাকার গাছ লাগাবে। যাই হোক, আমার কি? আমার পকেটে তো টাকা আসতেছে, নাকি? আমার স্বার্থ উদ্ধার মানে জগৎ সংসারে কোন সমস্যাই নাই, যাহা যেভাবে চলিতেছে তাহাই সঠিক। মাঝে মাঝে আমার চিন্তার জগতে সাধু ভাষা চলে আসে। যাই হোক, মূল কথা, আমি টিউশনি করাই টাকার জন্য। অবশ্য সবাই টিউশনি টাকার জন্যই করে তবে আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু অন্য রকম। কোন কোন শিক্ষক যদি দেখেন যে তার ছাত্র পড়াশোনা করতে চায় না, তখন তারা চেষ্টা করে তাকে বুঝিয়ে অথবা পিটিয়ে পড়ানোর জন্য, যেটা নাকি প্রতিটা বাঙালি অভিভাবকের কাম্য। আর আমি কি করি? ছাত্রের বাসায় যাই, তার যদি পড়তে মন চায়, কিছু শিখতে মন চায় তাহলে আমি পড়াই, নাহলে সুন্দর মত চা-নাস্তা খেয়ে, বিশ্রাম নিয়ে চলে আসি।  এজন্য কখনো কখনো আমার টিউশনি চলে যায়, কিন্তু আমি পরোয়াই করি না। কি মনে করছেন, হ্যাঁ? টিউশনি ইচ্ছা করে কম করাই, চাইলেই সারাদিন পড়াতে পারতাম। কিন্তু নিজের জীবন বলে একটা কথা আছে যে। আচ্ছা যাই হোক, আন্টি জিজ্ঞাসা করছিলেন আমি অবসর আছি কিনা। আমি টিউটর মানুষ, আবার পাবলিকে পড়ি, ব্যস্ততা তো আমাকে দেখাতেই হবে। ওকে, টাইম স্টার্ট!

"তুমি যদি আজকে একটু অবসর থাকতা তাহলে আজকে একটু আসতে পারবা?"
"আন্টি মানে আজ আমি সারাটা দিন একটু ব্যস্ত, ক্লাস আছে দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত, ক্লাসের পর আবার টিউশনি আছে বোঝেনই তো।"
"কোন ভাবেই কি একটু আসা যায় না আজকে? দেখ না, একটু চেষ্টা করে।"
কি বলব ভাবছি, হ্যাঁ বলে দেই যদি এখন পড়তে রাজি হয়। আমার তো টং থেকে কেটে পড়ার জন্য অযুহাত দরকার ছিল নাকি?
"আচ্ছা, যদি এখন আসি তাহলে আধা-ঘন্টা বা পঁয়তাল্লিশ মিনিট সময় দিতে পারব সর্বোচ্চ। আসবো?"
"অবশ্যই, আসো বাবা।"
ফোনটা কেটে দেখলাম লিখন হাসতেছে।
"বন্ধু, তুই কানেক্টশন লস খেলে গেমটা জিতছি।"
"ওরে, জোস মামা।"
"বন্ধু তুমি তো দেখি ভালোই চাপাবাজি করলা স্টুডেন্টের মায়ের সাথে।"
"তোমরা যেন চাপাবাজি কর না? বাসা থেকে বের হয়েছ তো ভার্সিটির নাম করেই, তা এখন কই আছ?"
"আরে মামা, চেতস কেন, মজা নিলাম।"
"হু, আমি গেলাম পড়াইতে।"
"আচ্ছা, যা। আমি আছি।"

বের হয়ে রওনা দিলাম ছাত্রের বাড়ির দিকে। যাই দেখি, আজকে বেতনটা দেয় কিনা, হাঃহাঃহাঃ।

(সম্পূর্ণ কল্পকাহিনী)

(বি:দ্র: এখানে কোন অভিভাবককে অসম্মান করা হয়নি এবং কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীকে অসম্মান করা হয়নি। এখানে সমাজের কিছু তিক্ত সত্য তুলে ধরা হয়েছে। কোন পাঠক পড়ার সময় বিব্রতবোধ করলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।)

                                                       [[অয়ন আল মামুন]]

জীবনমাল্য

লেখক ... .

No comments:

Post a Comment