কি করা যায় ভাবছি।
সময় নষ্ট করা যাবে
না, ঘড়ির কাঁটা যে
থেমে নেই। সুতরাং আর
চিন্তা ভাবনা না বাড়িয়ে সুন্দর
করে হেডফোন আর মানিব্যাগটা পকেটে
ভরে নিজের রুম থেকে বের
হয়ে স্যান্ডেলটা পড়ে বাসার দরজাটা
খুললাম।
"এই
নীল! কই...."
দিদির
চিৎকার এই পর্যন্তই শোনা
গেল, ততক্ষণে দরজা লাগিয়ে দিয়েছি
তাই কাউ কাউ করতে
করতে আর কি বলেছে
শুনি নাই। কিন্তু ঘটনা
হল, আমি তো এখন
ও সিঁড়িতেই দাঁড়িয়ে, কই যাব অথবা
কি করব তাই তো
জানি না। এর থেকে
কি সদাই এনে আবার
সুন্দর করে শুয়ে পড়াটাই
ভালো সমাধান ছিল? ক্ষুধা ও
লেগেছে, চা-বিড়ি ও
খাওয়া দরকার। সকালে যেই গরম-গরম
চা খেলাম, ভাবতেই আমার নাক-মুখ
কুঁচকে গেল। যাই চা-নাস্তা খেয়ে আসি।
টং এ ঢুকতেই লিখনের
সাথে দেখা।
"আরে
মামা, কি অবস্থা?" লিখন
হাত মিলানোর জন্য হাতটা বাড়িয়ে
দিল।
"এইতো
মামা আছি। তোর কি
অবস্থা?" হাত মিলাতে মিলাতে
জিজ্ঞেস করলাম।
"আছি
ভালোই, ঘাতকে ঢুক, এক ম্যাচ
হয়ে যাক।"
"এই
শালা, ঘুম থেকে উঠলাম
মাত্র, বিড়িটা তো আগে খাইতে
দে।"
"আচ্ছা,
খা। আমি এক গেম
খেলি তাহলে, এরপর তুই আয়।"
সিগারেটটা
ধরাতে ধরাতে সম্মতিসূচক মাথা নাড়লাম।
কিছু
কথা আগে বলে নেই,
লিখন আমার ছোট বেলার
বন্ধু। আপাতত আর কিছু জানার
প্রয়োজন নেই ওর ব্যাপারে।
"ঘাতক" হল একটি ফার্স্ট-পার্সন অনলাইন শুটিং গেম। এই প্রথম
বাংলাদেশি কোন একটা গেম
যেটা শুধু বাংলাদেশ না,
সারা বিশ্ব কাঁপাচ্ছে। গেমটির বর্তমানে প্রায় সব প্লাটফর্ম এ
সাপোর্ট আছে।
এটা
মূল কথা ছিল না,
মূল কথা কথা হচ্ছে
আমি একজন "ঘাতক" প্রো। গেমটা যদিও বছর দুয়েক
আগে বের হয়েছে, আমি
খেলা ধরেছি মাস ছয়েক আগে।
গত সিজনে ও আমার ওয়ার্ল্ড
রেঙ্কিং টপ ১০০ তে
ছিল। কিছু দিন আগে
দেশি একটা টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন
ও হয়েছি।
ওয়েট,
এটা ও মূল কথা
না। আসল কাহিনী হল,
মানুষজন মনে করে যে
আমি হার্ড-কোর গেমার, শখের
গেমার। ঘটনা মোটেই সত্য
নয়। আমি টাকা কামানোর
ধান্ধায় গেম খেলি। ঘাতকে
স্কিন/আউটফিট/ইমোটি বেঁচে টাকা কামাই, টুর্নামেন্ট
জিতে টাকা কামাই। ইষ্ট্রিমিং
করে ও টাকা উঠানো
যায়, ওটা আগে করতাম
কিন্তু বিশেষ একটা কারণে এখন
সেটা করি না। ঘটনা
হল....
"কিরে,
ঢুকস না কেন!"
ধূর,
কি একটা জ্বালাতনে পড়লাম,
টং এ আসলাম কেন,
আর এখন করতে হবে
কি।
আমি
লিখনকে জিজ্ঞেস করলাম,
"ক্লাস
নাই তোর?"
"আছে
তো, কিন্তু যামু না দেইখাই
তো এখানে বসে আছি।"
"ওহ,
বাকি পোলাপান কই?"
"হয়
ঘুমে নাইলে প্রেম করতে গেছে আর
নাইলে ক্লাসে গেছে। বিকালের আগে কেউ আসবে
না।"
"ও
আচ্ছা।"
"ভাই,
না খেললে সরাসরি বল খেলবি না।"
এই ইভেন্টের সব কালেক্টেবল আমার
পাওয়া শেষ, সব কিছু
বিক্রি ও করা শেষ।
এখন খেলে কাজ কি,
তাও বন্ধুর কথা রাখতে একটা
ম্যাচ খেলা লাগবে। বলা
যায় না বন্ধুরা কখন
কি কাজে লাগে, তাই
মন রক্ষা করতে হয়। অবশ্য
মন রক্ষা না করলে ও
প্রয়োজনে এই সব পোলাপান
সবার আগে দৌড়ায়া আসবে
এটা নিশ্চিত, কিন্তু কেন তা এখনো
বুঝে উঠতে পারলাম না।
খালি বইতে পরেই গেলাম,
বিপদেই বন্ধুর পরিচয়। আজব তো, তোর
সাথে নাই আমার কোন
রক্তের সম্পর্ক, আমার বিপদে সাড়া
দেওয়া তো তোর জন্য
ফরয না। তবে হ্যাঁ,
বন্ধুরূপী সাপ ও আছে
যারা তোমাকে যখন তখন বাঁশ
দিতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা বোধ করবে না। মানুষ
আসলে ও আজব প্রাণী,
কখন যে পিঠ বাঁচায়
আর কখন যে মারা
দেয় তার কোন ঠিক-ঠিকানা নাই। আচ্ছা থাক,
খেলি একটা ম্যাচ।
"ও
বন্ধু সরি, দাঁড়া ১
মিনিট, লগইন হচ্ছে।"
"হু,
তোরে ইনভাইট করতেসি দেখ।"
এখান
থেকে কেটে পড়তে হবে
জলদি, বেহুদা বসে থাকার কোন
মানে হয় না। কি
বাহানা দেওয়া যায় ভাবি।
[[অয়ন আল মামুন]]
No comments:
Post a Comment