বর্ষণমুখর সন্ধ্যা‬ --- অয়ন আল মামুন

নীল প্রতিদিনই নবীনবাগের রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়া করে।মাঝে-মাঝে মনে তার একটা আশা জাগে যে মেয়েটাকে সে আবার একটিবার দেখবে।কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি।মেয়েটা যেন এক সোনার হরিণ।সেই একবার দেখা দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল।আর কোন খোঁজ-খবর নেই।এমন ও হতে পারে যে মেয়েটা এই এলাকায় থাকে না।হয়তো ঘুরতে এসেছিল,পথিমধ্যে চায়ের দোকান দেখে সেখানে দাঁড়িয়ে এক কাপ চা খেয়ে চলে গেছে।কিন্তু নীল এ যুক্তি মানে না,মানতে নারাজ।তার ধারণা,ভাগ্যে লেখা থাকলে আবার দেখা হবে।যদিও ভাগ্য সম্পূর্ণ আল্লাহর হাতে।
সেদিন সন্ধ্যাবেলা,প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে।বৃষ্টি সকাল থেকেই হচ্ছে,মাঝে-মধ্যে তার ইচ্ছে মত থামছে,আবার ইচ্ছে মত ঝড়ছে।নীল হেঁটে যাচ্ছে নবীনবাগের রাস্তা দিয়ে।রাস্তায় লোকজন নেই,থাকার কথা ও না,এই প্রবল বৃষ্টিতে বাইরে কে থাকবে?পুকুরপাড়ের আগের জায়গাটুকু অনেকটা মাঠের মত,আশে-পাশে বড়-সড় গাছপালা ও নেই,বাজ পড়লে সরাসরি নীলের উপর পড়ার সম্ভবনা আছে।আকাশে বিদ্যুৎ ও চমকাচ্ছে একটু পরপর,বাজ পড়লে অবাক হওয়ার কিছু নেই।যদিও নীলের এই ব্যাপারে বিন্দুমাত্র মাথা-ব্যথা নেই।তার ধারণা,পড়লে পড়ল,আর কি আছে জীবনে?পুকুরপাড় পার হবার পর একটু পর হঠাৎ সে লক্ষ করল,একটু দূরে একটি মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আসছে।দূরত্ব কিছুটা কমলে নীল দেখতে পেল,এতো সেই মেয়েটি।মেয়েটির কাঁধে ব্যাগ,মনে হয় কোথাও পড়তে গিয়েছিল।নীল এবং মেয়েটি যখন প্রায় মুখোমুখি তখন নীল তার পাশের একটি বালুর স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে মেয়েটিকে যাওয়ার জন্য জায়গা করে দিল।কারণ রাস্তা ভাঙা,ভাঙা জায়গায় পানি জমেছে,আর প্রচন্ড কাঁদা তো আছেই।তাই পাশাপাশি দুইজন যাওয়া-আসা সম্ভব নয়।মেয়েটি যখন নীলকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিল,তখনই তীব্র বেগে একটি গাড়ি তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করল।ফলাফল,ব্যাপক পানি ও কাঁদা ছিটালো গাড়িটি এবং ছিটলো মেয়েটির গায়ে।মেয়েটি নীলের পাশেই দাঁড়িয়ে পড়ল।মেয়েটি প্রথমে নিজের অবস্থা দেখল,তারপর গাড়িটির দিকে তাকাল।গাড়িটি ততক্ষণে ছুটে অনেক দূর চলে গেছে।মেয়েটির চেহারা দেখে মনে হচ্ছে,পারলে গাড়িটার ড্রাইভারকে ধরে তুলে আছাড় মারে।প্রচন্ড রাগে মেয়েটার মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে,কিন্তু না পারছে কিছু করতে,না পারছে সহ্য করতে।নীল হাসল।
"পৃথিবীতে যদি আপনি ক্ষমতাবান কেউ না হন,তবে কেউ আপনাকে পরোয়া করবে না,প্রয়োজন ছাড়া কেউ আপনার ধার ও ধারবে না।" নীল বলল।
মেয়েটা ঝট করে নীলের দিকে তাকাল।চেহারা দেখে মনে হচ্ছে, কিছুটা অবাক,যদি ও আরো রেগে যাওয়ার সম্ভবনা ও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
"গাড়িটির নাম্বার ০২-০৪৭৫।কিছু করতে চাইলে করতে পারেন।"
বলে এক চিলতে হাসি দিয়ে নীল আবার হাঁটা শুরু করল।অপরদিকে মেয়েটা নির্বাক, নীলকে ডেকে কিছু বলবে কিনা চিন্তা করল।কয়েক সেকেন্ড পর এ চিন্তা বাদ দিয়ে বাসার দিকে হাঁটা শুরু করল মেয়েটি।ছেলেটাকে তার পরিচিত বলেই মনে হলো,আগেও কোথাও দেখেছে।ভাগ্যে লেখা থাকলে আবার ও দেখা হবে।কথায় যে আছে, "ভাগ্যের লিখন,না যায় খণ্ডন?"
‪#‎বর্ষণমুখর_সন্ধ্যা‬
‪#‎হঠাৎ_তোমার_জন্য‬


Unknown

লেখক ... .

No comments:

Post a Comment