ভালোবাসা তারপর ~~ ফাইয়াজ ফাহিম

রাত প্রায় সাড়ে তিনটার মত বাজে
বোধহয়।ঘড়ি ও অনেকটাই যেন ঘুমিয়ে
পরেছিল।কট কট কিংবা টিক টিক কাটার
আওয়াজ ও কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে
যাছে এমন ছিল সময়টা।সন্ধ্যায় দমকা বৃষ্টির
পর সমস্ত রাত ধরে অদ্ভুত একটা শীত
নেমেছে শহরজুড়ে।কুয়াশার মত বৃষ্টি
হচ্ছে বাইরে,সেই সাথে মিহি একটা
ঠান্ডা হাওয়া।ছয় ঋতুর পালা বদলের
সময়টায় খুব বিচিত্র একটা দোটানায় থাকে
রাতের বিশাল প্রহরটা।আজকাল সিলিং
ফ্যান,টেবিল ফ্যান দুটোই সমানে
চালিয়ে দিয়ে ঘুমাতে হয়।দরজা-
জানালাও যতটা পারা যায় খুলে রাখতে
হয় গরমের জন্য।এমন নিত্যদিনের অর্ধ সেদ্ধ
রোজনামচার মাঝে সন্ধ্যাবেলাটা
আচমকা এসে যেন সব গরমিল করে দিয়ে
গেছে।পুরো শহরকে নিশ্চিত মনে ঘুম
পাড়িয়ে দিয়েছে এক রাতের জন্য।
কারেন্ট ও নাই।এক পশলা,দুই পশলা,তিন
পশলা করে কয়েক দফায় বৃষ্টি হয়ে গেছে।
রাস্তার হিলিয়াম বাতির হলুদ আলোও আজ
জেগে নেই দেখে পিচ ঢালা
রাস্তাগুলো চিক চিক করে নদীর মত
কৃষ্ণকায় দেহের জানান দিচ্ছে না।শুধু
শেষ রাতের দিকে এসে একটা একটা করে
তারা জাগা শুরু করেছে বৃষ্টির অবসরে।
ভাঙ্গা চাঁদটাও উঠবে হয়ত যে কোন সময়।
ততক্ষণ পর্যন্ত আশ্চর্য একটা ঘুটঘুটে
অন্ধকারে পুরো শহরটাটা ডুবে আছে।
মাতালের মত নেশাগ্রস্ত হয়ে ঝিমিয়ে
গেছে।দূরে বহুদূরের কোনো রাস্তায়
ছেলে-ছোকরার পায়ের লাথিতে
টিনের কৌটার ছিটকে যাওয়ার শব্দগুলো
ও বড় বিচ্ছিন্ন মনে হয়।এরকম রাতে কারো
জেগে থাকার মত অপরাধ করা উচিত না
পারতপক্ষে।কাথা-মুড়ি দিয়ে এই
খন্ডকালীন বর্ষার রাতের শীত আমুদে
গায়ে মেখে ঘুমিয়ে থাকায় দরকার।
মশারির আবছা দেয়ালের ওপাশের
খোলা জানালা দিয়ে শনশন করে একটা
ঠান্ডা বাতাস আসছে,ঘুম পাড়ানি বাতাস।
এই বাতাসে জেগে থাকা বড্ড কঠিন।
চাইলেই চোখের পাতা খোলা রাখা
মুশকিল।কয়েক মণ ভার নিয়ে চোখের
পাতা ভারী হয়ে আসে।ফিসফিস করে
কানের পাশে কেউ যেন বলতে
থাকে,''ঘুমিয়ে পর....ঘুমিয়ে পর...ঘুমিয়ে
পর....''পায়ের পাতা কাথার সামান্য
বাহিরে গেলেই শিরশিরে একটা ঠান্ডা
ভাব এসে নিচু স্বরে জানান দিয়ে
যায়,এখন জেগে থাকার সময় নয়।পৃথিবী
বিশ্রামে যায়নি,নিদ্রায় যায়নি,তন্দ্রায়
গেয়ে বর্ষা কিংবা বৈশাখের আগমনী
বার্তার একটা হিমেল রাত্রিতে।এরকম এক
রাত্রিতেও রাশেদের চোখে ঘুম নেই।ঘুম
থাকবে কি করে তার সমস্ত চিন্তা চেতনা
ঘিরে আছে রূপা।সে জানে রূপা হয়ত এখন
ঘুমায়নি.পড়ছে হয়ত এখনো।বিছানায় শুয়ে
থাকতে রাশেদের আর ভালো লাগে না।
বিছানায় উঠে বসে হাতঘড়ির দিকে
তাকায় রাশেদ।তিনটা পয়ত্রিশ বাজে।
দরজা-জানালা সব খোলা।পিনপিন শব্দে
সুর তুলে এক গাদা মশা উড়ছে।যদিও কিন্তু
একটা মিহি ঠান্ডা বাতাস আসছেই
ক্রমাগত জানালা দিয়ে।চোখের চশমাটা
খুলে দুই আঙ্গুল দিয়ে নাকের ওপর দিকটায়
চোখের কোনা টিপে ধরল দরজার দিকে
এগিয়ে এসে।বাহিরে কেমন যেন
ঘোলাটে একটা আলো ফোটা শুরু
করেছে এতক্ষণে।শেষ রাত কিংবা
ভাঙ্গা চাঁদের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে
আলোটা।যদিও মিহি একটা কুয়াশা টাইপের
বৃষ্টি থেকে থেকে চড়িয়ে যাচ্ছে
অনেক দূর পর্যন্ত,বহুদূর থেকে মালবাহী
ট্রাকের চাকার তীব্র আর্তনাদ শোনা
যায়।ভয়ঙ্কর গতিতে বেপরোয়াভাবে
গাড়ি চালাচ্ছে ড্রাইভার।বিচ্ছিন্ন
কোনো কুকুরের করুণ সুরে কান্নার আওয়াজ
পাওয়া যায়।তারপর আবার পিনপিতন
নিস্তব্ধতা।সময় যেন অসম্ভব ধীর গতিতে
গড়াচ্ছে।পানির তৃষ্ণা লেগেছে।পানির
বোতলটা বিছানার পায়ের কাছে।
বোতলে পানি আছে কিনা কে জানে।
দরজার কাছ থেকে ফিরে এসে পানির
বোতলটা অন্ধকারে হাতড়ে তুলে নিল
রাশেদ।স্বল্প পরিমান পানি আছে
বোতলে।মুখ লাগিয়ে ঢকঢক করে পুরোটা
খেয়ে নিয়ে সবে দরজার দিকে পা
বাড়িয়েছে এমন সময় ফোনটা বেজে
উঠলো।রিংটোন অন করাই ছিল।নিস্তব্ধ
রাতের মাঝে সেই সামান্য শব্দে
চারপাশের নীরবতা যেন ঝনঝন করে
ভেঙ্গে পড়ল।চৌকির উপর রাখা একশ
একটা কাপড়-চোপড় দলামোচা করে
ফেলে রাখা।মোবাইলটা তার মাঝেই
কোথাও লুকিয়ে আছে।দেখা যাচ্ছে না।
তাড়াতাড়ি খুঁজতে থাকে রাশেদ
মোবাইলটা।পাছে রিংটোনের শব্দে
বাবা-মার ঘুম ভেঙ্গে যায় যদি।ভাইব্রেশন
দেয়া থাকায় বিছানাটা থেকে থেকে
মৃদু লয়ে কাঁপছে।শব্দ আর ভাইব্রেশন থাকা
সত্ত্বেও অবশ্য বেশ বেগ পেতে হল
রাশেদকে।একবার রিং থেমে
দ্বিতীয়বার রিং শুরু হয়েছে কেবল,তখন
খুঁজে পেল ফোনটা।যার ফোন এসেছে
আন্দাজ করেছিল,সেই করেছে।ফোনটা
রিসিভ করে কানে লাগালো রাশেদ।
"হ-হ্যালো?"
অনেক্ষণ কথা না বলে থাকার পর কথা
বলতে গিয়ে কেমন যেন আটকে গেল
কথা।
"হ্যালো?জেগে আছো এখনো।"ওপাশ
থেকে ফিসফিস একটা কণ্ঠ ভেসে এলো।"
"হু,জেগেই আছি।আরেকটু পর কল দিলে
হয়তো ঘুমে পেতে।মাত্রই শোয়ার
চিন্তা-ভাবনা করছিলাম।"খোলা দরজা
দিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো রাশেদ।
এখানে ঝিরঝিরে একটা ঠান্ডা বাতাস
বইছে।জুড়িয়ে যেতে লাগলো শরীরটা।
একটা চেয়ার রয়েছে বারান্দায়।ওটার
ওপর দলামোচা করে একটা প্যান্ট ফেলে
রাখা হয়েছিল।রাশেদ চেয়ার নিয়ে বসল।
"তুমি ঘুমাওনি এখনও?"
"ঘুমাবো কি করে?কালকে পরীক্ষা আছে
জানো না?ভুলে গেলে?যে একেকটা
পরীক্ষা দিচ্ছি আজকাল।মেডিসিন দিলাম
ওইদিন,সারারাত পড়ে গেলাম।প্রশ্ন
যেগুলা গেল সেগুলা আমি কেন,আমার
চোদ্দ গুষ্টিও দেখে নাই।"একদমে ফিসফিস
করেই বলে গেল রূপা।একটা মানুষ কেবল
ফিসফিস করেই এতোটা হরবড়িয়ে
কিভাবে কথা বলে রাশেদ ভেবে পায়
না।একটু অবাক হয়ে বলল,"এত ফিসফিস করছ
কেন?আশেপাশে মানুষ আছে নাকি?"
"আছে তো,আম্মা আছে।সন্ধ্যার সময়ই
আব্বা-আম্মার ঝগড়া।একজন অপরজনের মুখ
দেখে না।আজকে আম্মা আমার সাথেই
ঘুমাবে।তাই ফিসফাস ছাড়া গতি নাই।"
"আমি তো ভেবেছিলাম তুমি পরীক্ষার
জন্য হোস্টেলে থাকবে।বাসায় এলে
কখন?"
"হোস্টেলে পড়া হতো না দেখেই তো
বাসায় এলাম।কিন্তু বাসায় এসে দেখি
কুরুক্ষেত্র।"এরপর মহাউৎসাহের সাথে
রণক্ষেত্রের বিবরণ দিল রূপা।যেন অনেক
আনন্দে আছে।
"এ দুজন একা একা থাকে তো,তাই ঠুশঠাশ
লেগে যায়।আমি থাকলে এত লাগত না।
আমাকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতো,বুঝলা?এইজ
ন্য বাচ্চা-কাচ্চা কখনো একটা নিতে
নাই,নিলে দুইটা।একটা বাইরে থাকলেও
আরেকটাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা যায়।আমি
দুইটা বাচ্চা নিব।"
"দু-দুইটা।"
"হু,তোমার কোন সমস্যা?"মোটামুটি হুঙ্কার
দিল রূপা।
"হ-না আ।আমার আবার কি সমস্যা থাকবে।"
"হুম,না থাকলে ভালো।আর থাকলেও
সমস্যা নাই।ডাক্তার হচ্ছি ওষুধপত্র দিয়ে
একেবারে লাইনে নিয়ে আসব।"একটানা
বলেই চলছে রূপা।রাশেদ টের পাচ্ছে
কান-টান গরম হয়ে যাচ্ছে লজ্জায়।প্রসঙ্গ
অন্যদিকে ঘোরানোর জন্য তাড়াতাড়ি
বললো,"তুমি যে এতো জোরে ফিসফিস
করে কথা বলছ তোমার আম্মা শুনতে
পাচ্ছে না?"
"আরে না!আম্মা ঘুম।আমি বারান্দায় এসে
বকবক করছি।"বেশ নিশ্চিন্ত সুরে কথাটা
বলল রূপা।
"অ।"কথা না পেয়ে চুপ হয়ে যায় রাশেদ।
"কি হল?কথা বল না ক্যান?হু?"
"কি বলবো?
"কথা নাই?"
"না ঠিক তা না..."
"তাহলে?আমি তো মুখ খুললেই রেলগাড়ির
মত চলতে থাকি।তোমার কথা বলে এত
সমস্যা কেন?"
নড়েচড়ে বসে রাশেদ।উত্তর খুঁজে পায়
না।তারপর বলে,"তোমাদের ওদিকে বৃষ্টি
হয় নি?আমাদের এদিক তো রীতিমত
ভেসে গেছে।চারপাশে এখন
বর্ষাকালের ঠান্ডা।"
"বৃষ্টি!এদিকে ঠাঠা রোদ... থুক্কু রাতের
বেলা রোদ কোথেকে আসবে।মানে
ঠাঠা গরম পরছে।খারাপ অবস্থা
একেবারে।একেতো গরম,তারপর কারেন্ট
নাই।তারপর পড়েছি শাড়ি...গরমে প্রায়
সেদ্ধ হওয়া দশা আমার।"
ভীষণ অবাক হয়ে বলল রাশেদ,"শাড়ি?এই
রাতের বেলা হঠাৎ শাড়ি?"
"ওহহ!বলতে তো ভুলেই
গিয়েছিলাম,আমাকে দেখতে এসেছিল
সন্ধ্যায়।তখন শাড়ি পড়েছিলাম।আর
খুলিনি।"সরল গলায় বলে রূপা।
সাথে সাথে জমে যায় রাশেদ।মেরুদন্ড
সোজা করে বসে চেয়ারে,প্রথম কয়েক
মুহূর্ত কথা খুঁজে পায়না রাশেদ।
"হ্যালো?"ফিসফিস শোনা যায় ওপাশ
থেকে।সাথে কাঁচের চুড়ির টুনটান শব্দ।
জিভ দিয়ে শুকনা ঠোঁট ভেজাল
রাশেদ,"তোমাকে দেখতে এসেছিল?"
"হু,সে জন্যই তো বাসায় এলাম পরীক্ষার
মাঝেও।"খুব সহজ গলায় বলতে থাকে
রূপা।"ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় সেটেল্ড।
সেও ডাক্তার।নিজের গাড়ি,বাড়ি সব
আছে।বড় কথা হল বাবা-মার একমাত্র
সন্তান,আমার মত।চাচ্ছিল এ মাসেই
পরীক্ষা শেষ হলে বিয়ে করে ফেলতে।
ছেলের নাকি খুব মনে ধরেছে আমাকে।"
কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে খসখসে গলায়
রাশেদ জিজ্ঞেস করল,"তাহলে কি ঠিক
হলো?বিয়ে কবে করছে সেই ছেলে?"
"আজব!তার বিয়ে কবে আমি কিভাবে
জানব?আমি কি তাকে বিয়ে করতে
যাচ্ছি নাকি?একটু আগে দুই বাচ্চার
ফ্যামিলি প্ল্যানিং করলাম তোমার
সাথে,সেটা কি?"চোখ মটকে বলে বলে
রূপা।
থমকে যায় রাশেদ।কথা হারিয়ে ফেলে
আবার।
"আচ্ছা তোমরা ছেলেরা এমন কেন?একটু ও
কি ভরসা করা যায় না আমাদের উপর?"
চুপ হয়ে যায় রাশেদ আবার।কথা খুঁজে পায়
না।অস্থির লাগতে থাকে খুব।বাহিরের
আবছা অন্ধকারের এক ফাঁক গলে এক
চিলতে চাঁদ বেরিয়ে এসেছে।যদিও খুবই
ম্লান আলো।সেই সাথে অসম্ভব ঠান্ডা
বাতাস।রাশেদ একদৃষ্টে সামনের সেই
ঘোলাটে আলোটার দিকে তাকিয়ে
থাকে উদাস ভঙ্গিতে।অস্থিরতটুকু কেন
যেন বাড়ছে।কথা বলতে না পারলে কেন
যেন এমন লগে।ভেতরে অসংখ্য কথা
পাগলের মত দৌড়াতে থাকে।অথচ বের
হতে পারে না একটা শব্দও।
"কি হল?চুপ হয়ে গেলে যে?মন খারাপ
হয়ে গেছে?এই?এই?এএএএইইই....."জবাব না
পেয়ে আরো জোরে ফিসফিস করে উঠল
রূপা।"উফরে!এই ছেলেটাকে নিয়ে আমি
আর পারব না।একটু ফাজলামো ও করা যায়
না।আশ্চর্য।এই এত গাল ফুলাও কেন তুমি?
তুমি তো দেখছি আমার লাইফে
এন্টারটেইনমেন্ট বলেই কিছু রাখবে না।
আমি দুস্টুমি করছিলাম তোমার সাথে।
আমাকে কেউ দেখতে আসেনি।একদম
সত্যি।ফার্মা সত্যি,মেডিসিন সত্যি,তিন
সত্যি,তিন সত্যি।প্লিজ এবার তো কিছু
বল।"করুণ সুরে বলে উঠে রূপা।
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত চুপ থেকে নীরবতা
ভাঙল রাশেদ,"তাহলে বললে যে শাড়ি
পড়েছ?চুড়ির শব্দ ও তো পাচ্ছি?"
"হু,শাড়ি পড়েছি।"হাল ছেড়ে দেওয়ার মত
করে বলল রূপা।"তুমি তো জানো শাড়ি
পড়ার জন্য মাঝে মাঝে মাথা আউলা
ঝাউলা হয়ে যায়।বাসায় এসেছি
একেবারে শেষ রাতে উঠে শাড়ি পড়ে
বারান্দায় বসে থাকব।তোমার সাথে কথা
বলব অনেকক্ষণ।ভোর হওয়া দেখবো।"
রাশেদ বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে থাকে।
"মাঝে মাঝে মনে হয় হলুদ জামিনের
শাড়ি পড়ে মাঝরাতে ঢাকা শহরের সুনসান
নীরব রাস্তাগুলোর মাঝে খালি পায়ে
হেঁটে বেড়াই।পায়ে থাকবে নূপুর আর
হাতভর্তি কাঁচের চুড়ি।শহরের আকাশ জুড়ে
একটা বিশাল চাঁদ ঝুলে থাকবে
সেদিন,প্রতিটা রাস্তায় টন কে টন
জোছনা ঢেলে দিয়ে বন্যা বানিয়ে
দেবে,আমি শুধু হাটবো....তুমি বুঝতে পারছ
তো?"
রাশেদ মুগধ হয়ে মোবাইলটা কানের
সাথে শক্ত করে চেপে ধরে।দৃষ্টি ঠিক
কতদূর চলে গেছে বুঝতে পারে না।কিন্তু
প্রচন্ড ইচ্ছা হয় রূপাকে একটু দেখতে,ওর
হাতটা ছুঁয়ে দেখার জন্য।
রূপা আবার বলে উঠে,"রাশেদ তুমি আমার
রাজপুত্তুর হয়ো না,তুমি আমার সেই বন্ধুটা
হও যে আমাকে আমার স্বপ্নের মত বাঁচতে
চাওয়াটাকে একদিনের জন্য হলেও পূরণ
করে দেবে।আমার মন খারাপের
সময়গুলোতে ভাঙা গলায় গান শুনিয়ে
আমার মন ভালো করে দেবে।আমার
মেয়ে জীবনটা মেয়ে জীবনে আটকে
দেবে না,আমাকে ঠিক তোমার মত করে
বাঁচতে দেবে।"ভারী অদ্ভুত শোনায় রূপার
আকুতিটুকু।
ভেজা চাঁদটার দিকে একদৃষ্টিতে
তাকিয়ে থাকতে থাকতে রাশেদ সূক্ষ
একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে।
রূপা আবার বলে,"মাঝে মাঝে তোমাকে
আমার রোবট মনে হয়।এত কথা যদি জমিয়ে
রাখ তাহলে আমি আমার ভালোবাসাটা
পাব কই?সমস্যা নেই,তোমার হাত ধরে
চুপচাপ বসে থাকব আমি।"
"আমি কি পিকে নাকি যে হাত ধরে বসে
থাকবে আর আমি তোমার মনে কি কি
ভালোবাসাময় চিন্তা-ভাবনা উদয় হচ্ছে
জেনে যাবো?"
আপন মনেই গজগজ করতে থাকে রূপা।
রাশেদের হাসি পায়।
রাশেদ বলে উঠে,"অর্ণবের একটা গান
মনে পড়েছে ঘোলাটে ঠান্ডা এই চাঁদটা
দেখে।শাড়ি পড়ে আছ শুনে গানটা আরো
বেশি মাথায় ঘুরছে কিছুক্ষণ হল।শুনবে?"
হাসি ফুটে রূপার চোখেও।"শুনব,তবে তার
আগে বল,আমাকে বিয়ে করবে?"
"করব।"
"দুইটা বাবু নিব,হু?"
"আচ্ছা,ঠিক আছে।"
"সমুদ্র দেখাতে নিয়ে যাবে?"
"আচ্ছা গেলাম।পুরো কক্সবাজার
সমুদ্রসৈকত তোমার শশুরবাড়ি,নো টেনশন।
আর কিছু?"
"আর?আর?...আচ্ছা না থাক পরে তুলে
রাখলাম ওটা।গান শুরু কর।"
"রূপা।"
"আবার কি?"
"টিপ পড়েছ?"
"নাতো।"
"কেন!আমার টিপ খুব পছন্দের।টিপ লাগিয়ে
ফেল।তারপর গান ধরব।"
"তুমি তো আর দেখতে আসছ না এখন।এই
অন্ধকারে আমি টিপ কোথায় খুঁজব?চিন্তিত
গলায় ফিসফিস করে রূপা।
"আমি কি জানি?তুমি জানো।খুঁজে দেখ।
না পেলে কলম দিয়ে টিপ এঁকে নাও।
"তোমাকে আসলে বলেই ভুল হয়েছে যে
আমি শাড়ি,চুড়ি পড়েছি।"গলায় বিরক্তির
লেশ মাত্র নেই রূপার।প্রশয় আর অনুরাগের
মিশেল একটা কণ্ঠ।
"আমি অপেক্ষা করছি।"হাসতে থাকে
রাশেদ।চেয়ারে হেলান দিয়ে
বারান্দার গ্রিলে দুই পা তুলে দেয়।
ঠান্ডা বাতাসটা বাড়ছে ক্রমশ।বৃষ্টি
আসবে কিনা বোঝা যাচ্ছে না।চাঁদটা
একবার বের হচ্ছে,আরেকবার লুকিয়ে
পড়ছে ঘন মেঘের আড়ালে।
"আচ্ছা যাচ্ছি।"ফোনটা লাইনে রেখে
উঠে যাওয়ার শব্দ পাওয়া গেল।
চোখ বন্ধ করে রাশেদ প্রতীক্ষা করছে
রূপার ফিরে আশার।আশ্চর্য রকম শান্তি
লাগছে কেন যেন বুকের ভেতরটায়।
খানিক বাদেই ফিরে এল রূপা,"নাও,টিপ
দিয়েছি।খুশি?এখন আর দেরি না করে গান
শুরু করো তো।"
মৃদু হাসে রাশেদ।"তোমাকে অনেক
অনেক ভালোবাসি রূপা।তুমি আছ বলেই
হয়তো পৃথিবীটা এখনো দুর্বোধ্য হয়ে
উঠেনি..."
খুব নিচু স্বরে রাশেদ গাইতে শুরু করে,
" কষ্টগুলো শিকড় ছড়িয়ে
ঐ ভয়ানক একা চাঁদটার সাথে
স্বপ্নের আলোতে
যাবো বলে
যখন চোখ ভিজে যায় রাতে...
ভালবাসা তারপর দিতে পারে
গত বর্ষার সুবাস,
বহুদিন আগে তারাদের আলো
শূন্য আঁধার আকাশ।..."

Unknown

লেখক ... .

No comments:

Post a Comment