আজ শুক্রবার।
ঈদের চতুর্থ দিন। দাঁড়িয়ে আছি মালিবাগ মোড়ের সিএনজি পাম্পে । আজ সারাদিন হিমুর মত হাঁটবো বলে বাসা থেকে বেড়িয়েছি। গায়ে হলদে পাঞ্জাবিও আছে। সবে মাত্র সকাল ১০ টা বাজে। চিন্তা করছি কোন দিকে যাবো। বেইলি রোড এ যাওয়া যায়। সেখানে প্রতিদিন ভিন্ন নাটকের আবির্ভাব হয়। যারা নাটক লেখেন তাদের উচিত অন্য দেশের নাটক নকল না করে প্রতিদিন
একবার করে হলেও বেইলি রোড ঘুরে যাওয়া। তাহলে এমনিতেই
নতুন কিছু বানিয়ে ফেলতে পারবেন তারা। যাই হোক। একবার রুপাদের বাসায় গেলেও হয়। ওদের বাসার নিচে একটা চায়ের দোকান আছে। খুব ভাল চা বানায়। সেখান থেকে এককাপ
চা খেয়ে রুপাদের বাসায় ঢুকবো। দুই তালায় বাসা। লাফ দিলেই দরজা পাওয়া যায়। বাসায় যেহেতু যাচ্ছি সাথে কিছু নিয়ে গেলে ভাল হয়। ওদের বাসার নিচেই গেন্ডারী বিক্রি হয়। মোটা দেখে একটা গেন্ডারী নিলে কি রুপার বাসার লোকজন মাইন্ড করবে? করতে পারে। করলে করুক আমার সমস্যা নাই। কিন্তু সঙ্গে কোনো টাকা নেই। চা এর দোকানদার আমাকে চেনে বলে মাগনা খাওয়া যাবে। কিন্তু বিশিষ্ট ইক্ষু বিক্রেতা আমাকে ইক্ষু দিবেন না। এগুলো ভাবতে ভাবতেই পৌঁছে গেলাম রুপাদের বাসার নিচে। চায়ের দোকান কোনো কারণে বন্ধ। কিন্তু ইক্ষু বিক্রেতা আছেন। ইক্ষু বিক্রেতার কাছে যদি বলি আমি রুপাদের বাসার কাজের লোক তাহলে
বাকিতে ইক্ষু পাওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। চেহারার যে অবস্থা
কোনো সন্দেহই করবে না।
- ভাই, মোটা দেখে দুটা ইক্ষু দেন। চিনি মিষ্টি না হইলে কিন্তু ইক্ষু ফেরত।
- আমানত লইবেন নাকি পিস।
- অবশ্যি পিস হবে । ছোট ছোট পিস হবে। মালকিনের হুকুম।
- কোন বাড়িতে ঢুকছেন?
- এই যে এই লাল বাড়িতে। নতুন এসেছি। কাজ পার্মানেন্ট করি নাই। আগে মালিক পক্ষের হাবভাব দেখি। সুবিধার না হইলে ছেড়ে দেবো। আচ্ছা ভাই আপনি তো শুনলাম এদের চেনেন। এরা মানুষ কেমন?
- ভাই, কোনো টেনশন নিয়েন না। এরা মানুষ বড় ভালা। আপনে চাকরি পার্মানেন্ট এর ব্যবস্থা করেন।
- জ্বী আচ্ছা। শুকরিয়া।
ইক্ষু বিক্রেতার কাছে
বেশ সুবিধা পাওয়া গেল। নিজে থেকেই কার্য
সমাধা করেছে। এমনকি ইক্ষুর দামও চায় নি। সম্ভবত বাড়িওয়ালার কাছ থেকে নেবে বলে। যাহাই হোক আমি ইক্ষু নিয়ে রুপাদের বাসার দরজার সামনে গেলাম। দরজায় দুইবার নক করতেই দরজা খুলে গেল। যেন আমার জন্যে দরজায় অপেক্ষার পালা হচ্ছিল। দরজা খুলে সিদ্দিক আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল, “আসেন হিমু ভাই। পার্টি তো অনেক আগেই শুরু হইছে । আপনে এত লেট কেনো? হাতে এগুলান আবার কি আনছেন? গেন্ডারী নাকি?”
আমার হাতের ইক্ষুগুল ছোঁ দিয়ে নিয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেল সিদ্দিক। বুঝলাম বাসায় পরিবারের কেউ নাই। সম্ভবত রুপার বান্ধবীরা এসেছে। আমার ধারনা ভুলও হতে পারে। হয়তো কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠান। আস্তে আস্তে গেলাম কথিত পার্টি রুমের দিকে। দরজা একটু খোলা। তাকাতেই দেখি
কতিপয় যুবক যুবতির উন্মত্তা। রুপাকেও দেখলাম
তাদের মাঝে। রাজ নামক একজনের সাথে তিনি খুব
নিকটবর্তী। আমি নিশ্চুপ বেরিয়ে গেলাম বাসা
থেকে। নিচে দেখা আবার দেখা হল ইক্ষু
বিক্রেতার সাথে। আমাকে দেখে একগাল হাসলো। আমি সেই হাসির উত্তর না দিয়েই দ্রুত পায়ে হাটা শুরু করলাম। অনির্দিষ্টের প্রতি সে যাত্রা।
হঠাৎ বাতাসে কণ্ঠস্বর, “ হে পথিক, তুমি কি পথ হারাইয়াছো?”
হিমুদের আকর্ষণ থাকতে নেই। হিমুরা পথ হারায় না। আমি হিমু হয়ে ঘুরতে থাকলাম ধুলোর নগরে।
No comments:
Post a Comment