{পর্ব ২}
সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে।
গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। আমিবসে আছি রমনায়। মোজাইক করা বেঞ্চ। ভিজে স্যঁতস্যাতে হয়ে গেছে। শুয়ে পরতে ইচ্ছেকরছে কিন্তু ভেজা বেঞ্চে শুতে মন চাইছে না। হিমুরা সবসময় স্বাভাবিকের উলটা টা করে।নবীন হিমু হিসেবে আমার উচিত ভেজা আর কাদায় মাখা রাস্তায় শুয়ে আকাশ মুখি হয়ে বৃষ্টিবিলাস করা। অনেক্ষন ধরে রমনায় আছি কিন্তু লোকজনের সমাগম খুব একটা নেই। মাটিতে শুয়েথাকা নীল হিমু কে কেউই দেখবে না হয়তো।
বেঞ্চের পাশেই কাদাটেরাস্তা। আমি বেঞ্চ থেকে নেমে বসেছি। চোখ বন্ধ। এখন শুইয়ে পরবো। নিথর হয়ে হয়ে পরেথাকবো। এমন সময় কে যেন আমাকে ডাক দিল। “হিমু ভাই...” আমি চোখ খুলে তাকিয়ে দেখিরুপাদের বাসার নিচের ইক্ষু বিক্রেতা। তার নাম মনে নাই। জোর পায়ে সে আমার দিকেআসছে। তার মুখ এক প্রস্থ হাসিতে অলঙ্কৃত। যেন সে আমাকেই খুঁজতে বেরিয়েছিল। বিজয়ের সে হাসিতে সে আমার দিকে ধেয়ে আসছে।
- হিমু ভাই। আপনে এখানে?
- হুম
- এই বর্ষার মাঝে এইখানে এমনে বইসা আছেন কেন?
- বসে নেই। শুয়ে পরছিলাম। তখনই আপনি ডাক দিলেন।
- গোস্তাকি মাফ করবেন হিমু ভাই। বুঝতে পারি নাই। তা এইখানেএমনে শুইয়া কি করবেন?
- মাটি হল মা। আমি মায়ের কোলে শুয়ে বৃষ্টি দেখবো।
- হিমু ভাই, ফায়দা কি?
- ফায়দা কিছুই নাই। আপনি যে মানুষ তাতে ফায়দা কি?
- সত্য বলেছেন। কঠিন সত্য। আমি কি পাওনার সাথে শুইতে পারি?
- অবশ্যি পারেন। মাটি তো শুধু আমার মা না।
- আফসোস! আপনের মত কেউ বুজে না। সবার এক ধান্দা। কেডা কার আগেযাইবো। কিয়ামত সন্নিকটে। আপনে কি বলেন হিমু ভাই?
- হুম! সন্নিকটে।
আমি আর ইক্ষু বিক্রেতা ইদ্রিসমাটিতে শুয়ে আছি। বৃষ্টি আমাদের দেহ ভিজিয়ে দিচ্ছে পরম মমতায়। মাটিরুপ মাতা আমাদেরপরম স্নেহে আগলে রেখেছে। জন্ম মাটিতে জীবন মাটিতে মৃত্যুও মাটিতে। ভেবেছিলাম রমনায়কেউ নাই। কাল কাক ছাড়া আমাদের কেউ দেখবে না। কিন্তু আমার ধারণা ভুল। ১৫-২০ জনটোকাই টাইপ পোলাপান আমাদের ঘিরে ঘুরঘুর করছে। তাদের চোখে নির্লিপ্ত প্রশ্ন। তাদেরমধ্যে সরদার গোছের একজন আমার মাথার কাছে এসে ফিস ফিস করে জিগ্যেস করলো আমরা কারা।আমি উত্তরে শুধু ইদ্রিসের দিকে তাকালাম। টোকাই সরদার বুঝে গেল যে আমাকে প্রশ্ন করেলাভ নেই। তাই সে ইদ্রিসের কাছে গেল। ইদ্রিস ঘুমিয়ে পরেছিল। ঘুম থেকে উঠে টোকাই দলদেখে প্রথমে একটু ভয় পেয়ে আমার দিকে তাকাল। আমি প্রশ্রয়ের হাসি হাসলাম।
ইদ্রিস আর টোকাই সরদারবিশাল বটবৃক্ষের আড়ালে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর তারা হাসি মুখে ফিরল। আমার কাছে টোকাইসরদার এসেই সালাম দিল। উত্তরের অপেক্ষা না করেই সে চলে গেল তার দলের কাছে।
- হিমু ভাই।
- বল ইদ্রিস।
- কাম ফাইনাল। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
- কিসের কাজ?
- আপনে শুধু দেখেন। এই ইদ্রিস কি করে।
- হুম।
টোকাই সরদার একটা তেহারিরপ্যাকেট নিয়ে এসে আমার সামনে রেখে বলল, “মাটি বাপ, অধমের হাদিয়া নেন” আমি ইদ্রিসেরদিকে তাকালাম। সে হাসছে। আমি হাদিয়া গ্রহণ করলাম।
No comments:
Post a Comment