নীল হিমুর প্রহর (পর্ব ৩) --- কিংশুক

{পর্ব ৩}

অন্ধকার ঘর।

বেড়ার ফাক দিয়ে সামান্য আলো আসছে। আমি খাটে শুয়ে আছি। বাইরে কিছু একটা নিয়ে গোন্ডগোল হচ্ছে। কুৎসিত গালি শোনা যাচ্ছে। আমি নির্বিকার ভাবে শুয়ে আছি। মুখের উপর একটা মাছি ভনভন করে ঘুরছে। নীল রঙের পেট মোটা মাছি হবার সম্ভাবনা। আলো নেই বলে দেখতে পারছি না। ইচ্ছে করলেই আলো জ্বালাতে পারি। হাতের কাছেই একটা সুইচ আছে। আবার নার্গিস কে বললেও হয়। সে দরজার অপাশেই আছে। ইদ্রিস তাকে বলেছে আমার সার্বক্ষণিক সেবা করতে।
হঠাৎ লাইট জ্বালানো হলো। আকস্মিক তীব্র আলোচ্ছটা সহ্য হলো না আমার। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। ইদ্রিস কানের কাছে ফিসফিস করে কথা বলতে লাগলো। বোঝা যাচ্ছিলো সে ভাল খবর দিতে এসেছে। তার কথায় একটা খুশির আমেজ আছে।

- হিমু ভাই সংবাদ শুভ।
- কেনো? তোমার পুত্র সন্তান হয়েছে?
- কি যে বলেন না হিমু ভাই। আমি তো এখনতরি নিকা করি নাই।
- অ ।
- হিমু ভাই...
- হু।
- ঘটনা হইলো গিয়া, আপনেরে টিবিত(টেলিভিশনে) দেখাইতেছে।
- অ
- দুপুরের পরের ঘটনা সারা দেশে ছড়াইয়া গেছে। হিমু ভাই, আমাদের আর পেছন ফিরা তাকাইতে হইবো না।
- অ
- আরে বুঝলেন না হিমু ভাই। আপনে পিরাতি পাইছেন। বইকালে রমনায় যা খেল দেখাইলেন। এখন খালি সময়ের অপেক্ষা । দূর দ্যাশ থেইকা মানুশ আসবে।
- তুমি খুশি?
- খুশি না মানে? বড়লোক হইতে আর মাত্র তিন হাত বাকি। এই যে দেখেন, এক দুই এই তিন। এইখানে ধনসম্পদ।
ইদ্রিস অঙ্গভঙ্গি করে দেখায় টাকা পয়সা মাত্র তিন হাত দূরে। ইতোমধ্যে ঘরে টিভি এসে গেছে সেটিং চলছে। আমাকে আমার প্রতিচ্ছবি দেখাতেই এই ব্যবস্থা। কিন্তু সম্ভবত কোনো সমস্যা হয়েছে। টিভি চলছে না। ইদ্রিস টিভি ওয়ালা ছোকড়া কে সমানে বকে যাচ্ছে।
অনেক ঝক্কিঝামেলার পর টিভি চালু হলো। তিভিতে হিমুকে দেখা গেল। সে টোকাই সরদারকে শুন্যে ভাসিয়ে ফেলেছে। “পদার্থবিদরা বিচি কলা খান” এরকম অবস্থা।
- ইদ্রিস টিভি বন্ধ কর।
- জ্বি আচ্ছা।
মুখ কালো করে সে টিভি বন্ধ করে দিল। এরকম সময় টোকাই সরদার হাজির। সে যে খুব খুশি তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
খুশি হওয়ার মতই ঘটনা। হাজার মানুষের সামনে শুণ্যে ভাসা, শত কণ্ঠের বাহবা। আর কি চাই? তার উপর আবার টিভিতে দেখিয়েছে পুরোটা।
- মাটি পিতা।
- হু?
- একজন মেয়েছেলে আপনার সাথে সাক্ষাত করতে এসেছে। সে মেন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে।
- অ।
- উনি বলেছে সাক্ষাত নাকি অতিব জরুরী। তার গায়ে ছিল নীল শাড়ী। সাদা পাড়। আচলে হাতের কাজ ছিল। হাতের কাজ দেখার মত হয়েছে।
- তার ব্লাউজের রঙ কি?
এরকম প্রশ্নে বেচারা চুপসে গেছে। আমি বাইরের দিকে হাটা ধরলাম। সম্ভবত রুপা এসেছে।
বস্তি থেকে মেইন রাস্তায় যেতে একটা গলিতে দুবার মোড় ঘুরতে হয়। আমি দ্বিতীয় মোড়ে গর্তে পরে গেলাম। পায়ে প্রচন্ড ব্যথা করছে। হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে মচকে গেছে। টোকাই সরদার আমাকে কোনোমতে ধরে বস্তির ভেতর নিয়ে এসেছে।
আমি খাটে শুয়ে আছি। নার্গিস পায়ে গরম তেল মালিশ করছে। বুঝতে পারছি, এ ব্যথা বেশ কিছুদিন আমাকে ভোগাবে।

ওই দিকে বড় রাস্তায় রুপা দাঁড়িয়ে ছিল অনেক্ষন। ঘন্টার হিসেবে কম করে হলেই সাড়ে তিন ঘন্টা। সে আমার উপর রাগ করে চলে গেছে। ভেবেছে আমি ইচ্ছে করেই তার সাথে দেখা করি নি।
মাঝে মাঝে মন খারাপ করা, রাগ করা ভাল। কিন্তু আফসোস একটাই, সে জানতে পারলো না যে তার কাছে ছুটে যেতে গিয়েই আহত হয়েছে মাটি পিতা নীল হিমু।

বেপার না। হিমুদের যেমন পিছু টান থাকতে নেই তেমনি আফসোসও থাকতে নেই। হিমুরা গাধামানব না হিমুরা হচ্ছে মহামানব।



Kingshuk

লেখক ... .

No comments:

Post a Comment