নীল মাথা চুলকাতে থাকল। রিকশাওয়ালা গেল কোথায়? সাত-সকাল বেলা এটা কি হল কিছুই বুঝতে পারছে না নীল। কিছুক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকার পর সে চিন্তাটা মাথা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু এ চিন্তা বাদ দেওয়ার জন্য কিছু একটা করা দরকার। ভালো কথা, আজ নববর্ষ। নীল ভাবল, তাহলে রমনা থেকেই এক দফা ঘুরে আসা যাক। যদি ও ভিড় নীলের মোটেও পছন্দ নয়, তবু উপলক্ষের দিন তো জাতি বের হবেই। শুধু উপলক্ষের সময়ই নীল অনেক কষ্টে এই উপচে পড়া ভিড় সহ্য করে।নীল রমনা পার্কের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করল। রোদ ও প্রখরভাবে তাপ দিচ্ছে। নীল হাঁটছে, রোদ আবার তাপ দিবে না সে কি হয়?
অবশেষে ঘন্টা দেড়েক হাঁটার পর নীল রমনার অস্তাচল গেটের সামনে উপস্থিত হল। গরমে দরদর করে ঘামছে সে, তার পরনের সবুজ পাঞ্জাবিটা পিঠের দিক দিয়ে ভিজে কালো হয়ে গায়ের সাথে লেপ্টে গেছে। অস্তাচলের গেটের সামনে সে যা দেখল তা দেখে সে মোটেও অবাক হল না। রমনায় ঢুকার জন্য বিশাল লম্বা লাইন। জাতি রমনায় যাওয়ার জন্য বরাবরই উঠে-পড়ে লাগে। সে হাঁটতে লাগল লাইনের শেষ মাথা খুঁজে বের করার জন্য। লাইন আর শেষ হয় না। অবশেষে হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর যাওয়ার পর লাইনের ইতি দেখতে পেল। সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ল নীল। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সে রমনার ভিতরের মানুষ-গাছপালা দেখতে লাগল। দেখতে দেখতে হারিয়ে গেল চিন্তার জগতে।
অবশেষে প্রায় এক ঘন্টা পর রমনায় প্রবেশ করল নীল। প্রচন্ড ভিড় এবং হৈ-চৈ শুনে তার প্রথমেই এখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার ইচ্ছা হল। তবু নীল এগোতে থাকল। আশেপাশের বসার জায়গাগুলো, বেঞ্চগুলো সব কপোত-কপোতী দ্বারাই ভর্তি। আর যেসব কপোত-কপোতী বসার জায়গা পায়নি, তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে পার্কের ভিতরে। ছোট বাচ্চা-কাচ্চা সহ অভিভাবকদের ও দেখা যাচ্ছে। তারা ভিড়ের মধ্যে তাদের বাচ্চা-কাচ্চা সামলাতেই ব্যস্ত। এর মধ্যেই হঠাৎ একটা ঘটনা প্রত্যক্ষ করল নীল।
একটি লোকের কাঁধে ছোট একটি মেয়ে। লোকটি সম্ভবত মেয়েটির বাবা। মেয়েটি শাড়ি পড়েছে, হাতে কাঁচের চুড়ি। লোকটি গরমে ভিজে একাকার, দরদর করে ঘামছেন নীলের মতই। কিন্তু তবু লোকটির মুখে হাসি। তার মেয়েটি ও গরমে অতিষ্ঠ। তবু তার বাবা তার রুমাল দিয়ে মেয়েটির মুখ মুছে দিচ্ছেন। মেয়েটি এদিক-সেদিক দেখাচ্ছে আর লোকটি ও সাথে সাথে মেয়েটিকে কাঁধে নিয়ে এদিক-সেদিক দৌড়ে বেড়াচ্ছেন। নীল অবাক হল। যেই সুখ সে খুঁজে বেড়াচ্ছে তার প্রতিফলন সে দেখছে লোকটির মধ্যে। সুখ কিনতে পাওয়া যায় না, এমনিতে চাইলে ও পাওয়া যায় না, সুখ অর্জন করে নিতে হয়। কিছুকিছু ছোট-খাটো আনন্দ ও মাঝে মাঝে মনের মাঝে বিশাল সুখ হয়ে দাঁড়ায়। নীল উল্টো দিকে ঘুরে হাঁটা দিল। রমনা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। গরমে সিদ্ধ হচ্ছে তবু মুখে তার হাসি, আজ তার রমনায় আসা সার্থক।
#নববর্ষ_১৪২৬
#হঠাৎ_তোমার_জন্য [[অয়ন আল মামুন]]
অবশেষে ঘন্টা দেড়েক হাঁটার পর নীল রমনার অস্তাচল গেটের সামনে উপস্থিত হল। গরমে দরদর করে ঘামছে সে, তার পরনের সবুজ পাঞ্জাবিটা পিঠের দিক দিয়ে ভিজে কালো হয়ে গায়ের সাথে লেপ্টে গেছে। অস্তাচলের গেটের সামনে সে যা দেখল তা দেখে সে মোটেও অবাক হল না। রমনায় ঢুকার জন্য বিশাল লম্বা লাইন। জাতি রমনায় যাওয়ার জন্য বরাবরই উঠে-পড়ে লাগে। সে হাঁটতে লাগল লাইনের শেষ মাথা খুঁজে বের করার জন্য। লাইন আর শেষ হয় না। অবশেষে হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর যাওয়ার পর লাইনের ইতি দেখতে পেল। সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ল নীল। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সে রমনার ভিতরের মানুষ-গাছপালা দেখতে লাগল। দেখতে দেখতে হারিয়ে গেল চিন্তার জগতে।
অবশেষে প্রায় এক ঘন্টা পর রমনায় প্রবেশ করল নীল। প্রচন্ড ভিড় এবং হৈ-চৈ শুনে তার প্রথমেই এখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার ইচ্ছা হল। তবু নীল এগোতে থাকল। আশেপাশের বসার জায়গাগুলো, বেঞ্চগুলো সব কপোত-কপোতী দ্বারাই ভর্তি। আর যেসব কপোত-কপোতী বসার জায়গা পায়নি, তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে পার্কের ভিতরে। ছোট বাচ্চা-কাচ্চা সহ অভিভাবকদের ও দেখা যাচ্ছে। তারা ভিড়ের মধ্যে তাদের বাচ্চা-কাচ্চা সামলাতেই ব্যস্ত। এর মধ্যেই হঠাৎ একটা ঘটনা প্রত্যক্ষ করল নীল।
একটি লোকের কাঁধে ছোট একটি মেয়ে। লোকটি সম্ভবত মেয়েটির বাবা। মেয়েটি শাড়ি পড়েছে, হাতে কাঁচের চুড়ি। লোকটি গরমে ভিজে একাকার, দরদর করে ঘামছেন নীলের মতই। কিন্তু তবু লোকটির মুখে হাসি। তার মেয়েটি ও গরমে অতিষ্ঠ। তবু তার বাবা তার রুমাল দিয়ে মেয়েটির মুখ মুছে দিচ্ছেন। মেয়েটি এদিক-সেদিক দেখাচ্ছে আর লোকটি ও সাথে সাথে মেয়েটিকে কাঁধে নিয়ে এদিক-সেদিক দৌড়ে বেড়াচ্ছেন। নীল অবাক হল। যেই সুখ সে খুঁজে বেড়াচ্ছে তার প্রতিফলন সে দেখছে লোকটির মধ্যে। সুখ কিনতে পাওয়া যায় না, এমনিতে চাইলে ও পাওয়া যায় না, সুখ অর্জন করে নিতে হয়। কিছুকিছু ছোট-খাটো আনন্দ ও মাঝে মাঝে মনের মাঝে বিশাল সুখ হয়ে দাঁড়ায়। নীল উল্টো দিকে ঘুরে হাঁটা দিল। রমনা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। গরমে সিদ্ধ হচ্ছে তবু মুখে তার হাসি, আজ তার রমনায় আসা সার্থক।
#নববর্ষ_১৪২৬
#হঠাৎ_তোমার_জন্য [[অয়ন আল মামুন]]
No comments:
Post a Comment