মন ভাল নেই।
বৈরি আবহাওয়া । যখন তখন মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পরবে। এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে । ভাজা রাস্তায় আমি হেটে যাচ্ছি। ঢাকা শহরে বৃষ্টির পর হাটার আলাদা একটা মজা আছে। চারপাশটা জীবন্ত লাগে। অন্য সময় তো গাছপালা ধোঁয়া আর ধুলায় ঢাকা থাকে। এই একটা কারনে হয়তো ঢাকা শহরের নাম টা সার্থক হয়েছে বলে মনে হয়।
বৃষ্টির পর সবকিছু সজীবতাপূর্ণ, আরও জীবন্ত লাগার কারণ হয়তো খুব সবুজ গাছের পাতা গুলো । মাঝে মাঝে এতটাই প্রানবন্ত লাগে যেন মনে হয় যে ওরা বুঝি আমার সাথে কথা বলছে।
"এই কিংশুক। একটু দাড়াও। কথা বলবো। কেমন আছো তুমি? কোথায় যাচ্ছো?"
নিজের মনেই উত্তর দেই প্রশ্নগুলোর। আচ্ছা এমন কি কোন যন্ত্র আছে যেটা দিয়ে গাছেদের সাথে কথা বলা যাবে? গাছের ভাষা আমাদের ভাষায় আর আমাদের ভাষা তাদের ভাষায় রুপান্তর করে দিবে? পরিচিত কোনো বিজ্ঞানি থাকলে ভাল হত। তাকে এই বিষয়ে জিগ্যেস করা যেত। দুর্ভাগ্য, আমার পরিচিত এমন কেউ নাই। যন্ত্র সম্ভবত নাই। আমার ধারনা যে স্যার জগদীশ হয়ত এই জিনিশ নিয়েও ভাবেছে। ভাবতে ভাবতে সেক্সট্যান্ট আবিষ্কার করেছে।
যাই হোক। আমি সবুজ পাতা দেখছি আর হেটে যাচ্ছি। বিস্ময় ভরা চোখে প্রকৃতি দেখছি। মুগ্ধ হচ্ছি।
[ এই খানে একটা প্যরা ছিল। বিশেষ কারনে দিলাম না। তা না হলে আমার ভিডিও গেম খেলা বন্ধুরা অসন্তুষ্ট হতে পারে। ]
হঠাৎ করে ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করেছে। শীতল বাতাস। শীত করছে। ব্যাগে একটা চাদর থাকার কথা। নাও থাকতে পারে। গরমকাল। বের করে রাখা অস্বাভাবিক না। ধোপাখানায়ও থাকতে পারে। আবার ব্যাগেও থাকতে পারে। ঠিক বুঝতে পারছি না। ব্যাগ খুলে দেখা ছাড়া আর উপায় দেখছি না।
ব্যাগে একটা চাদর আছে ঠিকই। কিন্তু চাদরটা আমার না। আমার ব্যাগে অন্যের চাদর থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আপাতত চাদরটা দিয়ে শীত কমাতে পারলেই হলো। তাই চাদরের মালিকানার প্রশ্ন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সুন্দর করে মুড়ে নিলাম নিজেকে। চাদর মুড়ি দেয়ায় আমার চেহারার কবি ভাব আরও প্রকট হয়েছে।
নীল পাঞ্জাবি সাদা পায়জামা আর দান কাঁধে ঝোলানো শান্তি নিকেতনি ব্যাগ। মুখে দাড়ি মোছের জঙ্গল আর মাথা ভরতি বড় চুল। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। আদতেই কবি বেশ। ঢাকার অভিজাত রাস্তা দিয়ে হাটছি। কিছুক্ষন আগে স্যান্ডেলটা ছিড়ে গেছে। আশেপাশে মুচি পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। তাই পলিথিনে ভরে ব্যাগে রেখে দিয়েছি। বড়লোকেদের জুতা ছিড়ে গেলে তারা কি করে? আমার মত নিশ্চয়ই মুচি খোঁজে না। নতুন জুতা কিনে নেয় সাথে সাথেই? যদি দোকান না পাওয়া যায় তখন? ধুর ! কি রেখে কি ভাবছি। বড়লোকেরা কি আর আমার মত রাস্তায় হাটে নাকি। তারা তো বড় গাড়ী হাকিয়ে ঘুরে।
শহরের ব্যাস্ত মানুষগুলো আসলেই খুব ব্যাস্ত নাকি ব্যাস্ততার ভান করে তা আমি বুঝতে পারি না। খালি পায়ে কবি মুর্তি হেটে যাচ্ছে। এরকম দৃশ্য তো কেউ এ শহরে হরহামেশাই দেখে না। তবুও কেউ আমার দিকে তাকাচ্ছে না। শুধু অভাগা কিছু বাচ্চা রা, এই মুধুময় বৃষ্টিতেও রেইনকোট পরে বা ছাতা মাথায় মায়ের হাত ধরে স্কুলে যাচ্ছে, তারাই আমার দিকে বিরুপ দৃষ্টি দিচ্ছে। আচ্ছা, ওদের আজকের টিফিন কি? ভুনা খিচুড়ি আর ডিম? নাকি বার্গার স্যান্ডুইস? কে জানে।
অজানার দিকে যাত্রার এক আলাদা আনন্দ আছে।
No comments:
Post a Comment