নীলের পথচলা --- অয়ন আল মামুন

ট্রেন কমলাপুর স্টেশনে এসে পৌছালো।যাত্রীরা তড়ি-ঘড়ি করে ট্রেন থেকে নামা শুরু করল,কিন্তু নীল তখন ও তার আসনেই বসে রয়েছে।কিছু দিন আগে ও বন্ধুদের সাথে সে ট্রেনের দরজায় ঝুলে-ঝুলে কত রোমাঞ্চকর ভ্রমণ করেছে,কিন্তু আজ সে সব ভ্রমণের ছিটে-ফোঁটা কোন ভাব-মূর্তি তার মধ্যে নেই।বার্ধক্য চেপে বসেছে যেন নীলের শরীরে।সব যাত্রী যখন নেমে পড়ল,ট্রেন যখন সম্পূর্ণ ফাঁকা,তখন নীল ধীরে-সুস্থে হেলতে-দুলতে ট্রেন থেকে নামল।ডিসেম্বর মাস,শীতের মাস।নীলের গায়ে একটি ধূসর লম্বা চাদর,পিঠে ছোট একটি ব্যাগ।বিশাল লম্বা চুল আর চাদরের কারণে তাকে অনেকটা কবি-কবি লাগছে।শৈশবে অবশ্য তার লম্বা কোঁকড়ানো চুলের কারণে অনেক বন্ধুবরই তাকে কবি নজরুল বলত।ঢাকার মাটিতে পা রেখে নীলের মনে হল যে কত যুগ পর যেন সে ঢাকার মাটিতে পা রাখল।নীলের পায়ে কম দামী নতুন এক জোড়া চপ্পল।নীলের পায়ে কোন জুতোই বেশী দিন টিকে না,হয়তো তার হাঁটার ভঙ্গিমার কারণে নয়তো তার প্রচুর হাঁটা-হাটির কারণে। মনে হচ্ছে,অন্যান্য শহরের তুলনায় ঢাকায় শীত কম।যদিও কুয়াশা আছে,শিশির ও হয়তো পড়ে, তবু ও ঢাকার শীত যেন গায়েই লাগে না।নীল চাদরটা ব্যাগে রেখে দিবে কিনা ভাবল,কিন্তু রাখল না।এখন শীতকাল,ভাবমূর্তি বজায় রাখতে হলেও গায়ে চাদর জড়াতে হয়।স্টেশন হতে বের হয়েই নীল বুঝতে পারল যে, ঢাকা শহরে জনসংখ্যাই শুধু বাড়েনি,যানবাহন ও বেড়েছে।এত সাত-সকালে এত জনতা রাস্তায় ভীড় জমেছে,তা বলাই বাহুল্য।বিরক্ত ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে নাড়তে রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো নীল।সূর্য এখন ও পূর্ব দিগন্তে উঁকি দেয় নি।কিছু দূর এগিয়ে একটি চায়ের দোকানে বসে এক কাপ লাল চা চাইল নীল।চা খেতে খেতে নীল আকাশের দিকে চেয়ে রইল।সকাল-সকাল আর বিকাল থেকে আবার সকাল-সকাল পর্যন্ত যে কোন সময় নীল আকাশের দিকে তাকায়, কিন্তু বাকি সময় যেমন : দুপুরে সে ভুলেও আকাশের দিকে তাকাবে না।সে দুপুর বেলা রোদের কারণে তো ভালো মত চোখ মেলে তাকাতেই পারে না,রোদ তো তার চির শত্রু।তার গরম ও অন্য মানুষের তুলনায় বেশী লাগে।এজন্য নীলের শীতকাল খুব পছন্দ।কারণ শীতকালে গরম অথবা রোদ কেউই তাকে বেশী একটা বিরক্ত করে না।চায়ে চিনি কম হয়েছিল,শেষ মুহূর্তের দিকে নীল চা প্রায় গিলে খেয়ে,চায়ের পয়সা দিয়ে আবার রওনা দিল।গন্তব্য তার বাসার দিকে।কত দিন বাসায় যাওয়া হয় নি।যদিও এ কথা চিন্তা করে নীলের কোন রকম আনন্দ হচ্ছে না, যথারীতি শূন্য দৃষ্টিতে রাস্তার দিকে তাকিয়ে হাঁটছে।সবে তো মাত্র মতিঝিল এসেছে,বাসা তো এখন ও অনেক দূরে।রিকশা নেওয়া যেত,কিন্তু নীল রিকশা নিবে না।নীল পারতপক্ষে কোন যানবাহনে উঠতে পছন্দ করে না,হেঁটে বেড়াতেই পছন্দ করে বেশী।কারণ যানবাহন যেখানে-সেখানে দাঁড়া করানো যায় না।আর যানবাহনে করে ঘুরে বেড়ালে প্রকৃতির রূপ কখনই দেখা হবে না।আর নীলের রাস্তায় হঠাৎ-হঠাৎ দাঁড়িয়ে এটা-সেটা দেখার অভ্যাস আছে।তবে অন্যান্য যানবাহনের থেকে নীলের রিকশা ভালো লাগে,ভালো বাতাস পাওয়া যায়।সে পারলে সারা বাংলাদেশ ঘুরত রিকশায় করে।কিন্তু সেটা সম্ভব নয়।কারণ বাংলাদেশের সকল রাস্তায় রিকশা চলে না,আর এত টাকা রিকশা ভাড়া দেওয়ার সামর্থ নীলের নেই,আর ইদানিং রিকশা ভাড়া তো এখন আকাশচুম্বী।নীলের ক্ষুধা ও লেগেছে বলে মনে হচ্ছে।হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে কিছু খেয়ে নিবে কিনা ভাবল।পরক্ষণেই মনে পড়ল দিদির কথা।দিদির হাতের রান্না কত দিন খাওয়া হয় না।হয়তো এত সকালে কিছু রান্না হয়েছে কিনা বাসায় এ ব্যাপারটা নিশ্চিত নয়,তবে যা পাওয়া যায় তাই খাবে নীল।দিদির রান্না তুলনাহীন।যদিও এত দিন পরে বাড়ি ফেরার পর,এত দিন বাড়ি না যাওয়ার জন্য ব্যাপক জবাবদিহিতা করতে হবে।কিন্তু সেটা নিয়ে না ভেবে নীল দ্রুত পা চালাল।বাসা এখন ও অনেক দূর,সবে মাত্র রাজারবাগ মোড়ে এসে পৌঁছেছে।
#নীলের_পথচলা
#হঠাৎ_তোমার_জন্য

Unknown

লেখক ... .

No comments:

Post a Comment